
বিশ্বজুড়ে ডেসমন্ড টুটুর মৃত্যুতে শোক করা মানুষের মধ্যে ছিল আমেরিকানরাও। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসানে সহায়তা করেছিলেন টুটু। এছাড়া বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও সাম্যের ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি । ৯০ বছর বয়সে গত ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ তাঁর মৃত্যু হয়।
দারিদ্র্যের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী টুটু অ্যাংলিকান চার্চের কাজের মধ্য দিয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিগতভাবে বিচ্ছিন্ন বর্ণবাদ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তিনি। দেশের গণতন্ত্রে উত্তরণে অবদান রাখার পর টুটু দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের নেতৃত্ব দেন। এ কমিশন বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহতা তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষমা ও আপোসের আদর্শকে এগিয়ে নিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সত্য, ন্যায়বিচার, সমতা এবং সমঝোতার প্রতি টুটুর অঙ্গীকারকে আজকের বর্ণবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হিসাবে অভিবাদন জানিয়েছেন।
`ডেসমন্ড টুটু একটি অধিকতর ভালো, মুক্ত ও সমতাপূর্ণ বিশ্ব গড়তে তাঁর অন্তরের আহ্বান অনুসরণ করেছিলে ‘, ২৬ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ৷ এতে আরও বলা হয়, ‘তার উত্তরাধিকার সীমানা অতিক্রম করে গিয়েছে। যুগে যুগে তা প্রতিধ্বনিত হবে।’
গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের অক্লান্ত কণ্ঠস্বর টুটু ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সহানুভূতিশীল আর আশাবাদী। তিনি বলতেন ক্ষমা করার অর্থ ভুলে যাওয়া নয়, বরং দ্বিতীয় একটি সুযোগ দেওয়া।

বর্ণবাদ অবসানের জন্য টুটুর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতারা ডেসমন্ড টুটুর রেখে যাওয়া ঐতিহ্যকে বর্ণনা করেছেন যেভাবে:
তিনি শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইরত মানুষের পাশে দাঁড়াতে- ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস।

আর্চবিশপ টুটুর সহমর্মিতা, নৈতিক সততা এবং অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম তাঁর দেশকে বর্ণবাদের অন্ধকার থেকে বের করে আনতে সহায়তা করেছিল। একইসঙ্গে তা বিশ্বজুড়ে মানুষকে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাঁর কণ্ঠস্বর যুগে যুগে টিকে থাকবে। তাঁর জীবন ও কর্ম সমগ্র মানবতার জন্য এক উপহার হিসেবে অনুরণিত হবে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
আর্চবিশপ টুটু বলতেন, বর্ণবাদ নীতি নির্যাতিতদের জন্য যতটা, নির্যাতনকারীদের জন্যও ছিল ততটাই অবমাননাকর- নিউ ইয়র্ক টাইমস
গভীরভাবে সমস্যা জর্জরিত এক ভূখণ্ডে এক নৈতিকতার আলোকবর্তিকা। বেগুনি জোব্বা পরা দুষ্টুমিতে ভরা এই যাজক মাঝে মাঝেই গৃহযুদ্ধের অতলে নিক্ষিপ্ত হতে বসা একটি দেশে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ছিলেন সাহস, মর্যাদা আর আশার অনুপ্রেরণা জাগানো প্রতীক। শান্তি এবং জাতিগত ন্যায়বিচারের জন্য তাঁর আন্তরিক আবেদন অদম্য রসবোধের সঙ্গে মিলে পতনোন্মুখ একটি দেশের জন্য যেন ক্ষত উপশমের মলম ছিল – লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস
‘আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর মূল্যবোধ, সহমর্মিতা এবং আশাবাদ দিয়ে ’ – মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
‘আর্চবিশপ টুটু ছিলেন এক সর্বজনীন চেতনা। নিজের দেশে মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের সংগ্রাম ছিল তাঁর ভিত্তি। তবে বিশ্বের সব প্রান্তেরই অন্যায়-অবিচারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি’ – সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
