
যদিও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সকলের জন্য হুমকিস্বরূপ, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে এর কারণে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে আছেন।
খরা ও বন্যার মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে নারী ও শিশুদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা পুরুষের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। এবং যেহেতু তারা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বড় অংশ, তাই প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাসের প্রভাব সবার আগে নারীদের স্পর্শ করে। জলবায়ু পরিবর্তন বাল্য বিয়ে ও জোরপূর্বক বিয়েসহ জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
তবে নারী ও মেয়েরা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার নয় — তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানগুলো কীভাবে হবে তার নকশা/প্রক্রিয়া প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বও দিচ্ছেন এবং তারা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ে যে উচ্চাকাঙ্খা বাড়ছে সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এখানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নারীদের ক্ষমতায়নে যে ৫টি কাজ করছে তা বর্ণনা করা হলো:
১. নারীদের পরিবেশের তত্ত্বাবধায়ক/সংরক্ষণকারী হিসেবে গণ্য করা
এডভান্সিং জেন্ডার ইন দি এনভায়রণমেন্ট (এজেন্ট-AGENT) ইউএসএআইডি এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দি কনজারভেশন অফ নেচার এর অংশীদারিত্বে পরিচালিত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গত প্রায় এক দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তন খাতে নারীদের ইতিবাচক পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এজেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ইউএসএআইডি নারীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে এবং গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও ইউএসএআইডি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমাধানগুলো আরো কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশগুলোকে জেন্ডার বিষয়কে লক্ষ্য রেখে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে থাকে।

ইউএসএআইডি-র সহায়তায় এজেন্ট প্রকল্প মত্স্য খাতে জেন্ডার সমতা এবং নারীদের ক্ষমতায়ন বাড়াতে কাজ করছে। যেখানে মৎস্য খাতের প্রায় অর্ধেক জনশক্তি হলো নারী কিন্তু তাদের অর্থনৈতিকভাবে আগানোর ক্ষমতা সীমিত অবস্থায় রয়েছে। তাদেরকে বাইরে রাখার কারণে নারীরা আয় উপার্জন করা থেকে পিছিয়ে থাকছে এবং নতুন বাজারে পৌঁছাতে পারছে না এবং এটি সামগ্রিকভাবে মৎস্য খাতের টেকসই করার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।
২. জীবন বাঁচাতে ভূ-স্থানিক ডেটা ব্যবহার করা
সারভিয়ার হলো ইউএসএআইডি এবং নাসার মধ্যে ১৬ বছরের অংশীদারিত্ব। এটি বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্থানীয় সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের ভূ-স্থানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে থাকে। সারভিয়ারের ডেটা খরা, বন্যা ও বনে আগুন লাগার বিষয় সম্পর্কে পূর্বাভাস পেতে সহায়তা করে ফলে সরকারি কর্মকর্তারা মানুষ প্রাণ হারানোর আগেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ইউএসএআইডি ২০১৯ সাল থেকে সারভিয়ার-এর ভূ-স্থানিক সেবাগুলো যাতে নারীদের চাহিদাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে পূরণে সহায়তা করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে, যেমন দুর্যোগের তথ্যগুলো এমন মাধ্যম ব্যবহার করে দেয়া হচ্ছে যা নারীদের কাছে সহজলভ্য। এছাড়াও ইউএসএআইডি ভূ-স্থানিক বিজ্ঞান সংক্রান্ত কাজে নারীদের কর্মসংস্থান ও তাদের কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্যে কারিগরি ও নেতৃত্বের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শদাতার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ করে দিচ্ছে।
৩. প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলা করা
প্লাস্টিকের বর্জ্য শুধু যে বিশ্বজুড়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে দিচ্ছে তা নয়, এটি ম্যানগ্রোভের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে জলবায়ু পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখে। ম্যানগ্রোভ হলো গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপকূলীয় উদ্ভিদ যা বাস্তুতন্ত্রকে সহায়তা করে। তাছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক যখন পোড়ানো হয় তখন উচ্চ পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুতে নির্গত হয়।
ইউএসএআইডি-র ক্লিন সিটিজ, ব্লু ওশেন (পরিচ্ছন্ন শহর, নীল সাগর) কর্মসূচি এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দ্রুত নগরায়ণের কারণে প্রতিবছর আনুমানিক যে ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে গিয়ে দূষণ ঘটাতো তা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইউএসএআইডি নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে নতুন ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে যার লক্ষ্য হলো একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং বর্জ্য সংগ্রহের অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করা।

৪. আরো কার্যকর ইউটিলিটি তৈরি করা
ইউএসএআইডি-র এনজেন্ডারিং ইউটিলিটি কর্মসূচি জ্বালানী শক্তি ও পানি পরিষেবা সংক্রান্ত ইউটিলিটিসহ ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত খাতগুলোতে নারীদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত ইউটিলিটি কার্যসম্পাদনদক্ষতাকে শক্তিশালী করছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ৬,০০০ এর বেশি নারীকে তাদের কর্মজীবনকে এগিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং ১,০০০ এরও বেশি নারীকে জ্বালানী ও পানি খাতের ব্যবস্থাপকীয় ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন পদগুলোসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
৫. নারীদের ভূমির অধিকার সুরক্ষিত করা
নারীদের ভূমির অধিকার যখন নিশ্চিত করা হয়, দেখা গিয়েছে তখন জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা তো বাড়েই এমনকি সামগ্রিকভাবে পুরো কমিউনিটির জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যে নারীরা প্রচলিত পদ্ধতিতে জমির ভোগদখলের উপর নির্ভরশীল জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা তারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন ও পানির উত্সগুলো কমে যাওয়ায় এবং জমির মাটি ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ইউএসএআইডি নারীদের জমির অধিকার সুরক্ষিত করা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের দরকারি অনুশীলন বাস্তবায়নে কাজ করছে যেমন, যৌথ নাম ও ভূমি নিবন্ধন। এছাড়াও ইউএসএআইডি ঘানা, মালাউ, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া ও ভারতে নারীদের ভূমি অধিকার সংক্রান্ত আইনী ও ভূমি-সম্পদ প্রশাসনের সংস্কার কাজে সহায়তা করছে।
আলোচনার টেবিলে নারীদের অংশগ্রহণ তাদেরকে প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে দিচ্ছে এবং তারা তাদের চাহিদা পূরণ করে এমন জলবায়ু সমাধানগুলোর পক্ষে অ্যাডভোকেসি করতে পারছে, যা সকলে পালন করার মাধ্যমে আমাদের যৌথ পৃথিবী ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবাই উপকৃত হতে পারেন।
এই কাহিনীর একটি সংস্করণ মিডিয়াম-এ প্রকাশিত হয়েছিল।