সেই আঠারো শতক থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কূটনীতিকদের বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠাচ্ছে। গত ১০০ বছর ধরে তাদের মধ্যে নারী কূটনীতিকগণও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি বাইডেন প্রশাসনের অগ্রাধিকার হিসেবে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, “বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি আমাদেরকে আরো শক্তিশালী, অন্যদের চেয়ে বুদ্ধিমান, আরো বেশি সৃজনশীল ও অধিকতর উদ্ভাবনী করে তোলে।” ব্লিঙ্কেন আরো বলেন, “বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সুনাম ও কদর রয়েছে। এই কাজটি আরো ভালোভাবে করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এমন কর্মীদের নিয়োগ দিতে হবে ও ধরে রাখতে হবে যারা সত্যিকারভাবে আমেরিকাকে (বিশ্ব দরবারে) তুলে ধরতে পারেন।”
এই ছয়জন আমেরিকান নারী কূটনীতিক এখনকার বিপুল সংখ্যক নারী কূটনীতিকের জন্য অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করেছেন।

লুসি লআচার্সন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিসের প্রথম নারী। তিনি ১৯২২ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ডিপ্লোম্যাটিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর তাঁকে সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯২৫ সালের ১১ এপ্রিল তাকে সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে থার্ড সেক্রেটারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

প্যাটি এইচ. ফিল্ড ডিপ্লোম্যাটিক এবং কনসুলার সার্ভিসকে একত্রিত করে একটি একক সংস্থা হিসেবে ফরেন সার্ভিস গঠনের লক্ষ্যে রজার্স অ্যাক্ট পাস করার পর এই সার্ভিসে যোগদানকারী প্রথম নারী। তিনি ১৯২৫ সালের ২০ এপ্রিল আমস্টারডামে ভাইস কন্সুলের দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেন এবং ১৯২৯ সালের জুন মাসে ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার জন্য ফরেন সার্ভিসের চাকরিতে ইস্তফা দেন।

রুথ ব্রায়ান ওয়েন জীবনে অনেক কিছুতেই প্রথম ছিলেন। তিনি কংগ্রেসে ফ্লোরিডার প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম নির্বাচিত নারী এবং কংগ্রেসে বিদেশ বিষয়ক হাউজ কমিটিতে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম নারী। ওয়েন প্রথম আমেরিকান নারী যিনি ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কূটনৈতিক মিশনের প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালনকারী হেলেন ইউজেনি মুর অ্যান্ডারসন-কে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৯ সালে ডেনমার্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিলে তিনিই প্রথম আমেরিকান নারী রাষ্ট্রদূত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি তাঁকে বুলগেরিয়ায় মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেন।

প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন বারবারা এম. ওয়াটসন–কে সিকিউরিটি অ্যান্ড কনসুলার অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দিলে, তিনিই হয়েছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি ও প্রথম আমেরিকান নারী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বারবারা ওয়াটসনকে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন।

প্রাগে জন্মগ্রহণকারী মেডেলিন অলব্রাইট শৈশবে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। কার্টার প্রশাসনের সময়ে তিনি হোয়াইট হাউজ এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাঁকে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত মেডেলিন জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সেক্রেটারি অফ স্টেট পদে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আমেরিকান নারী।