১৯৬৩ সালের বিখ্যাত ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, সাবেক দাসের সন্তান ও সাবেক দাসদের মালিকদের সন্তানরা একদিন ভ্রাতৃত্বের টেবিলে পাশাপাশি বসতে পারবে।
যেসব আমেরিকান দাস বা দাসের মালিক হিসেবে তাদের পূর্বপুরুষদের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত তাদের পক্ষে কিংয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাটা অবশ্য সহজ হয়নি মোটেই। কারণ দাসপ্রথা আর তার পর বছরের পর বছর ধরে যে জাতিগত বৈষম্য চলেছে তার সঙ্গে কারো নিজের পরিবারের যোগসূত্র থেকে থাকলে বিষয়টি হয়ে ওঠে আরও বেশি স্পর্শকাতর।
২০০৫ সাল থেকে ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন মেনোনাইট ইউনিভার্সিটি ভিত্তিক কর্মসূচি ‘কামিং টু দ্য টেবল’ এ নিয়ে কাজ করছে। এর লক্ষ্য মীমাংসা আর সংলাপের চেতনা নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ বংশধরদের এক টেবিলে বসানো।এসব ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটি প্রায়শই হয় সবচেয়ে কঠিন।
২০০৭ সালে বেটি কিলবির সামনে ফিবি কিলবির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ আসে। বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখতে গিয়ে বেটির মনে হয়েছিল, তিনি কেন এমন কোনও লোকের পরিবারের সাথে দেখা করবেন যারা কিনা তার প্রিয়জনদের দাসত্বের নিগড়ে বেঁধে রেখেছিল। ১৯৫০ এর দশকে সাদা-কালো পৃথকীকরণ পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছিলেন বেটি কিলবি। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের একজন হিসাবে ভার্জিনিয়ার একটি বিচ্ছিন্নকরণ তুলে দেওয়া এক স্কুলে পড়েছিলেন তিনি।
ফিবিও ভয় পাচ্ছিলেন। ভাবছিলেন বেটি তার ওপর রেগে যাবেন কিনা এমনকি তার সাথে আদৌ কথা বলতে চাইবেন কিনা।

তবে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে অন্যরকম একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। অতীতকে সামনাসামনি মোকাবেলার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। আর এ আগ্রহ দুজনকেই আজকের আমেরিকার জাতিগত চিত্রের বাস্তবতার সঙ্গে দাসপ্রথা ও তার প্রভাব এখনো কতটা প্রাসঙ্গিক তা আরও ভালো করে বুঝতে সাহায্য করেছে।
‘কামিং টু দ্য টেবল’ এর ওয়েবাসাইট বলছে: বিচ্ছিন্নকরণ, সম্পদের অসম বন্টন, শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে অসাম্য এবং গায়ের রঙের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ ও অনগ্রসর হিসেবে চিহ্নিত করার উৎস হচ্ছে দাসপ্রথা নামে আমেরিকার সেই প্রথা ও সেইসব বিশ্বাস যেগুলো কীনা এর সৃষ্টি ও বৈধকরণকে সমর্থন দিয়েছিল।
কর্মসূচিটি আরও বলছে: “পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য সব আমেরিকানের উচিত হবে অতীতকে বোঝা ও তার মুখোমুখি হওয়া।’’
শ্বেতাঙ্গ অংশগ্রহণকারী উইল হেয়ারস্টন বলেছেন, এই কৃষ্ণাঙ্গদের তাকে নিজের লজ্জা ও কৃষ্ণাঙ্গদের রাগের ভয়কে মোকাবেলার পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার ইতিহাসকে আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে সহায়তা করেছে।
হেয়ারস্টন বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, মার্টিন লুথার কিং আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি শুধু বহুদিনের, একশ বছর আগের বেদনার কারণে এটি করেননি। ভয়াবহ সহিংসতার মুখেতা করেছিলেন যা কিনা আক্ষরিকভাবে তার দরজায় এসে চড়াও হয়েছিল। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন, শত্রুকে ভালবাসার মাধ্যমে আপনি তাদের মুক্ত করতে আর বদলে দিতে পারেন।