যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস: বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় পরম শ্রদ্ধায়

প্রতি বছর জুলাই মাসের চার তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ কোটি মানুষ আতশবাজি, শোভাযাত্রা আর দলবেঁধে ঘরের বাইরে রান্না করে খেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দিবসটি উদযাপিত হয়। গণতান্ত্রিক দেশগুলো তাদের নিজেদের ঐতিহ্য মেনে দিবসটির উদযাপন করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

উপরের ছবিতে ডেট্রয়েট নদীর তীরে আতশবাজি দেখা যাচ্ছে, এই জায়গাটি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে কাজ করে। এই আতশবাজি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম ফেস্টিভ্যালের অংশ। কানাডার উইন্ডসর ও মিশিগানের বৃহত্তম শহর ডেট্রয়েট যৌথভাবে প্রতিবছর ১ জুলাই কানাডা দিবস ও ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের স্মরণে জুলাই মাসে আয়োজন করে থাকে। এই বিশেষ অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ দশনার্থীর সমাগম হয় এবং এটি উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম আতশবাজি প্রদর্শনীগুলোর অন্যতম।

এই লেখাতে বিশ্বের দূর দূরান্তের দেশগুলোতে আমেরিকান সঙ্গীত, খাবার ও সংস্কৃতি সহযোগে ৪ জুলাই আমেরিকার ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আরো কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো। দিনটি উদযাপনে স্থানীয় মানুষেরা আমেরিকানদের (পর্যটক ও প্রবাসী) সাথে যোগ দেয়।

ডেনমার্ক

পাহাড়ের ধারে বসে থাকা মানুষের বিশাল ভীড় (© হেনিং ব্যাগার/এএফপি/গেটি ইমেজ)
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ২০১২ সালের ৪ জুলাই ডেনমার্কের নর্দার্ন জুটল্যান্ডের রেবিল্ড ন্যাশনাল পার্কে আয়োজিত রেবিল্ডফেস্টে আগত অংশগ্রহণকারী। (© হেনিং ব্যাগার/এএফপি/গেটি ইমেজ)

ডেনমার্কের উত্তরাঞ্চলের ছোট শহর রেবিল্ডে ৪ জুলাইয়ে বড় ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবটি কীভাবে শুরু হয়েছিল? এই শহরের অনেক বাসিন্দা উনিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন এবং কয়েক বছর পর তাদের কেউ কেউ আবার রেবিল্ডে ফিরে আসেন এবং তারাই ৪ জুলাইয়ের স্মরণে এই উৎসব আয়োজনের রীতি চালু করেছিলেন।

রেবিল্ডে “রেবিল্ডফেস্ট” নামের এই উৎসব বিগত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আয়োজিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর দীর্ঘ সপ্তাহান্ত (সাপ্তাহিক ছুটির সাথে আগে-পরে যুক্ত ছুটির দিন) ধরে আয়োজিত এই উৎসবে আতশবাজির পাশাপাশি, আমেরিকান সঙ্গীত, আমেরিকান স্টাইলে হট ডগ ও বারবিউকিউ খাবার ছাড়াও ডেনিশ স্মারব্রেড ওপেন-ফেসড স্যান্ডউইচ খাওয়া হয়। সেই সঙ্গে আমেরিকান ও ডেনিশ উভয় সংস্কৃতির বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডের আয়োজনের মাধ্যমে রেবিল্ডফেস্ট উদযাপিত হয়।

আয়ারল্যান্ড

আকাশ থেকে তোলা নদীর ধারে শহরের ছবি (© শাটারস্টকডটকম)
আকাশ থেকে তোলা আয়ারল্যান্ডের ব্যারো নদীর তীরে কাউন্টি ওয়েক্সফোর্ড এর নিউ রস শহর যার সীমান্ত কাউন্টি কিলকেনির সঙ্গে রয়েছে। (© শাটারস্টকডটকম)

এমনটা মনে করা হয় যে, আইরিশরা ৪ জুলাইকে অতোটাই কাছে টেনে নিয়েছে যতোটা আমেরিকানরা সেন্ট প্যাট্রিক ডে উদযাপন করে।

আয়ারল্যান্ডে ৪ জুলাই উদযাপনের অন্যতম বৃহত্তম আয়োজনটি করা হয় নিউ রস শহরে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির দাদা বড় হয়েছেন। এই শহরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে কয়েকদিন ব্যাপী উৎসবের সূচনা করা হয় এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা ১৭৭৩ সালের বোস্টন টি পার্টির সেই ঘটনার অভিনয় উপভোগ করে। যেই ঘটনায় “প্রতিনিধিত্ব ছাড়া ট্যাক্স” এর প্রতিবাদে ব্রিটিশদের মালিকানাধীন চা বোস্টন হারবারে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

নরওয়ে

উদ্যান ও মূর্তিসহ পাহাড় দেখা যায় (© হাই পেস্কিন/গেটি ইমেজ)
অসলোর ফ্রোগনার পার্ক যেখানে বার্ষিক ৪ জুলাই আয়োজনে নরওয়েজিয়ান ও আমেরিকানদের বিশাল সমাবেশ ঘটে। (© হাই পেস্কিন/গেটি ইমেজ)

নরওয়ের রাজধানী অসলো-তে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবছর ৪ জুলাই লাইভ মিউজিক, শোভাযাত্রা, আমেরিকান খাবার, বেসবল ও সফটবল গেমস এবং আতশবাজি প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ফ্রোগনার পার্কে। নরওয়ের আমেরিকান কোঅর্ডিনেটিং কাউন্সিল আয়োজিত জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় ও প্রবাসী আমেরিকানরা সমবেত হয়ে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন উপভোগ করে।

এছাড়াও লিলস্ট্রেম শহরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিনটেজ গাড়ির শোভাযাত্রা, লাইভ মিউজিক এবং আমেরিকান খাবারের আয়োজন করা হয়।  দেশটির দক্ষিণের জেলা শহর লিস্টারে প্রতি বছর জুনের শেষের দিকে চার দিন আমেরিকান উৎসব আয়োজন করে থাকে।

অস্ট্রেলিয়া

: সিডনি অপেরা হাউজ ও সিডনি হারবার ব্রিজের দৃশ্য (© শাটারস্টকডটকম)
২০১০ সালের ৪ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউস দেখা যাচ্ছে। (© শাটারস্টকডটকম)

প্রবাসী আমেরিকানরা অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে মিলে সিডনির মতো শহরগুলোতে প্রতিবছর ৪ জুলাই উদযাপন করে। সত্যি বলতে কী সিডনির ডার্লিং হারবার এলাকায় দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম ৪ জুলাই উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ লাল, সাদা ও নীল (যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া উভয় দেশের পতাকার রঙ) পোশাক পরে থাকে।