যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবন গোটা বিশ্বের জন্য চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা, স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৃজনশীল সমাধান তৈরির সামর্থ্য যোগাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে (

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতেও এই উদ্ভাবনী চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বৈচিত্র্য উদযাপন, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, এবং এমনকি ডিসইনফর্মেশন (উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা প্রচার বা কুতথ্য) মোকাবিলার ক্ষেত্রেও নতুন নতুন সব পথ দেখায়।
বায়ু-মান নির্ধারণ অ্যাপ, জেফএয়ার
বিশ্বজুড়ে শহরগুলোতে বায়ুর মান নিয়ে বিশ্বস্ত, ও রিয়েল-টাইম ডেটা প্রদান করে জেফএয়ার। ব্যবহারকারীরা এটি থেকে অবস্থান-নির্দিষ্ট সুপারিশ পেয়ে থাকেন বায়ু দূষণের প্রভাব লাঘবের জন্য, যা কিনা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের ৭০টিরও বেশি দূতাবাস, কনস্যুলেট ও সহযোগী সংগঠনের পর্যবেক্ষণ সাইট থেকে ডেটা সংগ্রহ করে জেফএয়ার। বেইজিংয়ের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ২০০৮ সালে নগরীটির বায়ু-মানের ওপর নজরদারি এবং রিপোর্ট করা শুরু করে, যা শেষ পর্যন্ত চীনের সরকারকে তাদের বায়ু-মান পর্যবেক্ষণের মাণদণ্ড আরও শক্তিশালী করতে উদ্বুদ্ধ করে।

অন্তর্ভূক্তির স্মার্ট ডিভাইস
বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভূক্তি হল দেশে এবং বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অ্যাপ জগতে, অ্যাক্সেসিবিলিটির (প্রবেশগম্যতা) কথা মাথায় রেখে স্মার্ট ডিভাইস ডিজাইন করার বাস্তব প্রভাব রয়েছে।
আর্মেনিয়ায়, লেটস টক নামের একটি অ্যাপ তৈরিতে অনুদান দিচ্ছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। নতুন এই অ্যাপ, বাক-প্রতিবন্ধী মানুষদের স্বাধীনভাবে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। আর্মেনিয় ভাষায় এই প্রথম কোনো অ্যাপ, ডিভাইসে থাকা ছবি ও টেক্সটের সাহায্যে ব্যবহারকারীদের সহজেই বাক্য গঠন করতে দেবে। এরপর একটি বাটনে চাপ দিলেই অ্যাপটি বাক্যটিকে অডিওতে রূপান্তর করবে।
এক আমেরিকান অধ্যাপকের সঙ্গে জোট বেঁধে আর্মেনিয়ার এক স্পিচ থেরাপিস্ট এই অ্যাপ ডিজাইন করছেন। তাঁদের পরিচয় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে। ২০২১ সালে তাঁরা গ্লোবাল ফান্ডিং প্রতিযোগিতায় তাঁদের প্রকল্প-প্রস্তাব জমা দেন এবং অ্যাপটি বানানোর জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুদান জিতে নেন।
টুম্ব গেইমার্স, রেইডার্স নয়
ভিডিও গেমস ও অ্যাডভেঞ্চার মুভির কল্যাণে আপনি হয়ত লারা ক্রফট ও ইন্ডিয়ানা জোনসের মতো কাল্পনিক চরিত্রদের চিনে থাকবেন। তারা সেখানে গুপ্তধন খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন খলনায়কেরা সেটি চুরি বা ধ্বংস করে ফেলার আগেই।
বাস্তব জগতেও, শিল্প ও সাংস্কৃতিক সম্পদ পাচার বা জাল করা একটি বড় সমস্যা। এর মাধ্যমে লাভবান হয় আন্তসীমান্ত অপরাধী সংগঠন ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো, ক্ষয়ে যায় শিল্পের বৈধ বাজার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। স্থানীয় পর্যায়ে, পাচার এবং তৎপরবর্তী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষতি, পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক জীবিকাকেও হুমকির মুখে ফেলে।
দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক সম্পদ চুক্তির (পিডিএফ, ৪৮০ কেবি) মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বস্তুর সংরক্ষণ এবং পাচার রোধে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে উদ্ভাবনী উপায়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও গ্লোবাল গেম জ্যাম ইনকর্পোরেশন, ২০২১ সালে ভিডিও গেম তৈরির একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা (“গেম জ্যাম”) শুরু করে। গেম জ্যাম, সমস্যা-সমাধানকে গণতান্ত্রিক করে তোলে এবং একটি অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তরুণদের সংগঠিত করে।

দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর ইউএসএ প্যাভিলিয়নে ২০২১ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ১১৬টি আন্তর্জাতিক দলকে সনাক্ত করা হয়, যারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে স্টোরিটেলিংকে সম্পৃক্ত করে গেম তৈরির প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ইরান, পেরু ও সুইডেনের সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠা পুরস্কারজয়ী দলটি তৈরি করেছিল পুরুনমাচু নামের গেমটি। এটি তৈরি হয়েছে পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার চাচাপোয়া গোষ্ঠীর প্রাচীন সংস্কৃতিকে ঘিরে। এখানে খেলোয়াড়দের রেইনফরেস্টে ঘুরে বেড়াতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কোনো পবিত্র বস্তু নিজেই নিয়ে নেবেন নাকি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করবেন।
দলটি ২০২২ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে গেম ডেভেলপারস কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং তাদের গেমটি উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছে। (আপনি তাদের গেমটি এবং অন্য সব কালচারাল হেরিটেজ গেম জ্যামের গেমগুলো খেলতে পারবেন বিনামূল্যে!)
ডিসইনফর্মেশন মোকাবিলা
ডেভেলপাররা ভিডিও গেম বানাচ্ছেন খেলোয়াড়দের আরেকটি বৈশ্বিক হুমকি বিষয়ে সচেতন করে তোলার জন্য: ডিসইনফর্মেশন। হারমনি স্কয়ার নামের এই অনলাইন গেম, খেলোয়াড়দের সেসব সাধারণ ডিসইনফর্মেশন কৌশল চিনতে ও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, যেগুলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস এবং সামাজিক আস্থা ক্ষুন্ন করতে ব্যবহার করা হয়।

ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অনুদানে ডাচ কোম্পানি ডিআরওজি এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে হারমনি স্কয়ার তৈরি করছে। এটি ২০২১ গেমস ফর চেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে দুটি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব এবং সেরা শিক্ষণীয় গেম। (ইংরেজি বা অন্য ১০টি ভাষায় আপনি হারমনি স্কয়ার খেলতে পারবেন বিনামূল্যে।)
যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে (এসটিইএম) গবেষণা ও উন্নয়নের বৈশ্বিক নেতা। এটি মানসম্মত শিক্ষা ও ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে অতুলনীয় সব সুযোগ প্রদান করে। ডেটা স্বচ্ছতা ও আইনের শাসনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মূল্যবোধগুলো এমন এক উন্মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলে করে যেখানে সৃজন ও উদ্ভাবন করা যায়।