প্রতি বছর, বিশ্বজুড়ে উত্সব আয়োজনকারীরা তাদের পরিচিত ও প্রিয় গান গেয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানায় আর নববর্ষের প্রথম মুহুর্তকে উদযাপন করে।
তেমনই একটা গানের কথাগুলো হলো (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরানো সেই দিনের কথা গানের সুর ও অর্থ অ্যল্ড ল্যাং সাইন থেকে নেওয়া): “পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায় / ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
“অ্যল্ড ল্যাং সাইন” গানের কয়েকশ সংস্করণ ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউড, স্পটিফাই কিংবা অন্য কোথাও রয়েছে, এবং এই গান “হ্যাপি বার্থডে” এর মতোই সকলের কাছে জনপ্রিয়।
‘অ্যল্ড ল্যাং সাইন’ বলতে কী বোঝায়?

এই প্রশ্নের উত্তর স্কটিশ কবি রবার্ট বার্নসের লেখা ১৭৮৮ সালের একটি কবিতাতে রয়েছে। সেই কবিতার শিরোনাম “অ্যল্ড ল্যাং সাইন” ১৮ শতকের স্কট ভাষার শব্দগুচ্ছ যার অনুবাদ হলো “পুরনো সেই দিন”
এই কবিতাটি বার্নস তার বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী ফ্র্যান্সিস ডানলপকে পাঠিয়েছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে যে, কবি বার্নস পুরনো আমলের গ্রামের কৃষকের গান শুনতে শুনতে তারই আলোকে এই কবিতাটি লিখেছিলেন।
কবিতাটি প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৯৬ সালে জেমস জনসনের স্কটস মিউজিক্যাল মিউজিয়ামে। ওই বছরই বার্নস মারা যান। এবং তার মৃত্যুর পরে কবিতাটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
স্কটিশ গানের সংগ্রাহক জর্জ থমসন ১৭৯৯ সালে প্রথমবারে মতো বার্নসের কবিতাটিতে সুরারোপ করেছিলেন।
সেই থেকে, “এই গান বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতির অংশ হয়ে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে,” উল্লেখ করে ইতিহাসবিদ রবার্ট ক্রফোর্ড ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে ২০১১ সালে বলেছেন, “এটি একটি নমনীয় গান — যা বন্ধুত্বের ধরন সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলে না — তাই নানান অনুষ্ঠানে অনেকভাবে একে ব্যবহার করা হয়।”
এই গান নববর্ষের দিনে কেন গাইবেন?

স্কটিশ এবং স্কটিশ কানাডিয়ানরা এই গানটি বছর শেষে — তাদের নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে সেই ১৯ শতকের প্রথম দিক থেকেই গেয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গাই লম্বার্ডো এবং তার গানের দল রয়েল কানাডিয়ানস ১৯২৯ সালে নতুন বছরের প্রাক্কালে “অ্যল্ড ল্যাং সাইন” গানটি বাজিয়েছিলেন, যা গানটিকে জনপ্রিয় করে তোলে।
“অ্যল্ড ল্যাং সাইন” গানের কথায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে: আমরা কীভাবে আগের বছরের স্মৃতি, বন্ধুবান্ধব ও অভিজ্ঞতাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে মনে রাখব?
এই প্রশ্নের উত্তরও বার্নস দিয়েছেন, নতুন বছরে যাত্রা করার সাথে সাথে নিজেদের অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার কথা বলেছেন (যার আলোকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন) ” আয়, আরেকটি বার আয় রে সখা / প্রাণের মাঝে আয়/ মোরা সুখের দুখের কথা কব / প্রাণ জুড়াবে তায়”।