
কর্তৃত্ববাদী শাসকদের দ্বারা তাদের সীমানার মধ্যে সাংবাদিক ও অন্যান্য সমালোচকদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার বিষয়টি পরিচিত বিষয়। পর্যবেক্ষক সম্প্রদায়ের মতে, তারা এখন তাদের সীমানার বাইরে গিয়েও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকি সৃষ্টি করছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি, ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে রাশিয়া, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে প্রধান অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ফ্রিডম হাউজ’র সভাপতি মাইকেল জে আব্রামোউইটজ বলেন, “বিশ্বজুড়ে নির্বাসিতরা নজরদারি, আক্রমণ, এমনকি অপহরণ ও হত্যার হুমকিকে একটি স্থায়ী সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে যা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করে তুলেছে।”
“দৃষ্টির আড়ালে, তবে নাগালের বাইরে নয়” [পিডিএফ, ১৮ মেগাবাইট] শীর্ষক প্রতিবেদনে গুপ্তহত্যা, অপহরণ, আক্রমণ, আটক ও অবৈধ নির্বাসনসহ আন্তঃসীমান্ত নিপীড়নের ৬০৮টি ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে।
গণতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যার দ্বারা সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অপরিহার্য এই অধিকারটি সুরক্ষিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে।
৩ মে তারিখে আমরা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করলেও বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকেরা তাঁদের প্রতিবেদনের জন্য ব্যাপক ঝুঁকির সম্মুখীন। ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখলের পর থেকে বার্মার সামরিক শাসকেরা এক ডজনের মত সাংবাদিককে কারাবন্দী করেছে।
সাংবাদিকেরা হুমকি, নিপীড়ন ও বক্তব্য নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হিসেবে উল্লেখপূর্বক এ বিষয়ে জনমত গঠনকারী গোষ্ঠী, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এই অভ্যুত্থান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টিকে “দশ দিনে দশ বছর” পিছিয়ে দিয়েছে। বার্মার সামরিক শাসকেরা “অভ্যুত্থান” ও “শাসক”সহ সুনির্দিষ্ট কিছু শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
https://twitter.com/RSF_inter/status/1384141646305009668
গত ২০ এপ্রিল প্রকাশিত RSF-এর ২০২১ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে সবচেয়ে মারাত্মক লঙ্ঘনকারী শ্রেণীতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (PRC), ইরান ও রাশিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছে বার্মা। ১৮০ টি দেশের মধ্যে বার্মার অবস্থান ১৪০, যেখানে রাশিয়া, ইরান ও PRC-এর অবস্থান তলার দিকে যথাক্রমে ১৫০, ১৭৪ ও ১৭৭।
RSF-এর মতে, “ইন্টারনেটে তথ্য নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি ও সরকারী প্রচারণায় বেইজিং অব্যাহতভাবে আগের সকল মাত্রা অতিক্রম করে চলেছে।”
ফ্রিডম হাউজ যোগ করেছে যে, “চীন বিশ্বের সর্বাধুনিক, বিশ্বব্যাপী ও ব্যাপকভিত্তিক আন্তর্দেশীয় নিপীড়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।”
গুলচেহরা হোজা রেডিও ফ্রি এশিয়া (RFA)-এর অর্ধ ডজন সাংবাদিকের অন্যতম যার আত্মীয়দেরকে তাদের প্রতিবেদনের জন্য PRC লক্ষ্যবস্তু করেছে। উইঘুর আমেরিকান হোজা জিনজিয়ানে PRC’র মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে লিখতে শুরু করার পর থেকে PRC কর্তৃপক্ষ চীনে তাঁর ২৪ জন আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে।
হোজা বলেন, তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাবেন। “আমরা স্বাধীন। আমাদের একটা দায়িত্ব আছে ব্যবস্থা নেয়ার।”
ফ্রিডম হাউসের মতে, ইরানের শাসকেরাও তাদের দেশের বাইরের সাংবাদিকদেরকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, বিদেশে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছে, সাংবাদিকদের কম্পিউটারে সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে এবং ইরানে সাংবাদিকদের আত্মীয়দেরকে গ্রেফতার করেছে।
RSF’র তথ্যমতে, সাংবাদিকদের ওপর মস্কোর নির্যাতন ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাত্রা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং মাঝে মাঝেই সেটা মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। রাশিয়ার নেতারা নিজ দেশের শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের গ্রেফতার করছে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ করছে ও হুমকি দিচ্ছে।
ফ্রিডম হাউসের তথ্যমতে, এই শাসকেরা চেচেন প্রজাতন্ত্রের ক্রেমলিনপন্থী নেতা রমজান কাদিরভের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিক ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে নির্যাতন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে কাদিরভ বলেছেন, “এই আধুনিক যুগে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সবকিছুই জানতে পারি। আপনাদের যে কাউকেই আমরা খুঁজে বের করতে পারি।”
আমেরিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পিতা বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে “উন্মুক্ত সরকারের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, “বাক-স্বাধীনতা ছাড়া মুক্ত সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে এবং সেই ধ্বংসের ওপর স্বৈরতন্ত্র কায়েম হবে।”