কৃষ্ণাঙ্গ নারী লেখকরা বদলে দিয়েছেন সমকালীন সাহিত্য

‘একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী লেখক হওয়া লেখার জন্য কোন অগভীর নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ জায়গা।’ টনি মরিসন নিউ ইয়র্কারকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন এ কথা। ‘এটা আমার কল্পনাকে সীমাবদ্ধ করে না, বরং প্রসারিতই করে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা লেখক, প্রকাশক, সাময়িকী সম্পাদক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে সাহিত্য জগতকে বদলে দিচ্ছেন।

এখানে ছয়জন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর কথা বলা হলো যারা আধুনিক আমেরিকান সাহিত্য-সংস্কৃতির চালচিত্র বদলে দিয়েছেন।


কাঁধ পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের চুলের এক নারীর প্রতিকৃতি (© মাইকেল লোকিসানো/গেটি ইমেজেস)
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্ক সিটিতে ‘এ জার্নাল ফর জর্ডান’ এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে ডানা কেনেডি।(মাইকেল লোকিসানো/গেটি ইমেজেস)

ডানা ক্যানেডি নিউইয়র্ক টাইমসের সাবেক পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক। ২০২০ সালে তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসেবে একটি বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের (সাইমন অ্যান্ড শুস্টার) নেতৃত্ব দেন। ইরাক যুদ্ধফেরত সেনা, নিজের প্রয়াত সঙ্গী সম্পর্কে ‘ জার্নাল ফর জর্ডান’ নামে বহুল বিক্রীত স্মৃতিকথা লিখেছেন।


বড় কানের দুল পরা ছোট চুলের হাস্যোজ্জ্বল নারী, পাশে আরো দুই ব্যক্তি (© মনিকা শিপার/গ্ল্যামার/গেটি ইমেজেস)
নিউ ইয়র্ক সিটিতে ২০২১ এর ৮ নভেম্বর ‘গ্ল্যামার’ এর ২০২১ সালের উইমেন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ডন ডেভিস (© মনিকা শিপার/গ্ল্যামার/গেটি ইমেজেস)

ডন ডেভিস ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান রান্না বিষয়ক প্রকাশনা ‘বন আপেটি’ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক হন। ডন ডেভিস আজীবন ভোজনরসিক। তিনিই এ পত্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান সম্পাদক। পত্রিকাটির জন্য তার প্রথম নিবন্ধে ডেভিস লিখেছিলেন, ‘বই প্রকাশনা ছেড়ে যখন এই বিখ্যাত ম্যাগাজিনটিতে যোগ দেওয়ার ডাক পেলাম তখন নাড়া দিয়েছিল জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক সমতার কথাটি। আর না করা সম্ভব হয়নি।’


কমলা রঙের চেয়ারে বসে হাঁটুর ওপর হাত রাখা নারী (© সিন্ডি ওর্ড/এনওয়াইএফওয়াই: দি শোজ/গেটি ইমেজেস)
সামিরা নাসর ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক সিটিতে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন সপ্তাহের ‘দ্য টকস’ -এ কথা বলছেন। (© সিন্ডি ওর্ড/এনওয়াইএফওয়াই: দি শোজ/গেটি ইমেজেস)

ফ্যাশনে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের পর সামিরা নাসর ২০২০ সালে হার্পারস বাজারের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান সম্পাদক হন হয়েছিলেন। ‘আমি শুধু আমার সঙ্গে আরও লোককে পার্টিতে নিয়ে যেতে চাই’, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মজা করে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছিলেন নাসর। ‘কারণ, আমি মনে করি বিষয়টা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে তাতে।’  ‘হার্পারস বাজার’ এর আগে সামিরা নাসর নিউইয়র্ক সিটিতে ‘ভোগ’ এবং ‘অ্যালিউর’ ম্যাগাজিনে কাজ করেছেন।


শীর্ষে থাকা ছবির গ্লোরিয়া জিন ওয়াটকিন্স (১৯৫২-২০২১) তার ছদ্মনাম ‘বেল হুক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একজন অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী হিসাবে বেল হুক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতি, লিঙ্গ এবং শ্রেণির পরস্পর সম্পর্কের বিষয়গুলো পাঠের ধরন বদলে দিয়েছিলেন। জীবনকালে ওয়াটকিন্সের ৩০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তার ১৯৮১ সালের মৌলিকধর্মী গ্রন্থ ‘আইন্ট আই এ উওম্যান?: ব্ল্যাক উইমেন অ্যান্ড ফেমিনিজম’। ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে নারীবাদকে বদলে দিয়েছিল। ‘আমি নারীবাদ শব্দটিকে নতুনভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম’, বইটিতে লিখেছেন ওয়াটকিন্স। ‘আমি এ কথাটার ওপর জোর দিতে চেয়েছিলাম যে, প্রকৃত অর্থে ‘নারীবাদী’ হওয়া মানে আসলে নারী এবং পুরুষ সব মানুষের জন্যই লিঙ্গবৈষম্যভিত্তিক ধরন, আধিপত্য এবং নিপীড়ন থেকে মুক্তি চাওয়া’।


রঙিন জ্যাকেট পরা খোলা বই ধরে থাকা এক নারীর প্রতিকৃতি (© ম্যালকম আলী/ওয়্যারইমেজ / গেটি ইমেজেস)
২০০৫ সালের অক্টোবরে অক্টাভিয়া ই. বাটলার তার বই ‘ফ্লেজলিং’ নিয়ে আলোচনা করেন (© ম্যালকম আলী/ওয়্যারইমেজ/ গেটি ইমেজেস)

অক্টাভিয়া ই. বাটলার (১৯৪৭-২০০৬) প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক যিনি ম্যাকআর্থার জিনিয়াস ফেলোশিপ জিতেছেন (১৯৯৫)৷ বাটলার বিশটির বেশি উপন্যাস লিখেছেন যার প্রতিপাদ্য ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অবিচার, নারীর অধিকার, জলবায়ু সংকট এবং রাজনৈতিক সমস্যা।  ‘আমি এমন লোকদের সম্পর্কে লিখি যারা অসাধারণ কাজ করে,’ বলেছেন অক্টাভিয়া বাটলার।…দেখা গেল লোকে একে বলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী!’


হাস্যোজ্জ্বল নারীর প্রতিকৃতি (© রোজেলিও ভি সোলিস/এপি ইমেজেস)
মিসিসিপির জ্যাকসনে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট মিসিসিপি বুক ফেস্টিভ্যালে জেসমিন ওয়ার্ড (© রোজেলিও ভি সোলিস/এপি ইমেজেস)

জেসমিন ওয়ার্ড টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঔপন্যাসিক এবং সৃজনশীল লেখার অধ্যাপক। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখালেখিতে ডিগ্রি নেওয়ার পর ২০০৮ সালে তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তখন থেকে তার ছয়টি উপন্যাস বেরিয়েছে। জেসমিন ওয়ার্ড সাহিত্যকর্মের জন্য দুবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বই পুরস্কার বিজয়ী প্রথম নারী। বইদুটি ছিল ‘স্যালভেজ দ্য বোনস’ (২০১১) এবং ‘সিং, আনবেরিড, সিং’ (২০১৭)।