সাম্য ও ন্যায়বিচার রক্ষায় সোচ্চারদের সম্মাননা

মঞ্চে চেয়ারে বসা মানুষেরা ডায়াসে দাঁড়িয়ে কথা বলা ব্যক্তির বক্তব্য শুনছেন (স্টেট ডিপার্টমেন্ট/ফ্রেডি এভারেট)
গ্লোবাল অ্যান্টি-রেসিজম চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ছয়জনের একজন বাংলাদেশের রানী ইয়ান ইয়ান গত ৯ আগস্ট ওয়াশিংটনে একটি অনুষ্ঠানে আগতদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছেন। (স্টেট ডিপার্টমেন্ট/ফ্রেডি এভারেট)

কাঠামোগত বর্ণবাদ সমাজকে দুর্বল করে। জনগোষ্ঠীতে যথাযথ সুযোগের অভাব থাকলে রাষ্ট্র সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। মানুষ যখন টিকা পায় না তখন রোগের বিস্তার ঘটে। ব্যক্তি যদি সরকারের ভেতর নিজের প্রতিফলন না দেখে, তখন গণতন্ত্রের প্রতি তার বিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

“বর্ণবাদ, বৈষম্য — শুধু নৈতিকভাবেই ভুল নয়; এগুলো আমাদের পৃথিবীকে অনিরাপদ, অস্থিতিশীল ও অসমৃদ্ধ করে তোলে,” স্টেট সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত ৯ আগস্ট বর্ণবাদ বিরোধী গ্লোবাল অ্যান্টি-রেসিজম চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন।

জাতিগত সাম্যকে এগিয়ে নেওয়া এবং দেশে-বিদেশে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীকে সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই পুরস্কার এবছরই চালু হয়েছে।

ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট জাতিগতভাবে প্রান্তিক ও আদিবাসীদের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জগুলো সরকারি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে এবং নিজ দেশে বৈষম্যের অবসানে কাজ করে যাওয়া মানুষদের সহায়তা করে।

জাতিগত সাম্য ও ন্যায়বিচারের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রথম বিশেষ প্রতিনিধি ডিজারি কর্মিয়ার স্মিথ।  তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সবাইকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদাহরণ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে এবং বর্ণবাদ বিরোধী প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন।

বলেন, “আশা করি আপনারা সবাই এখান থেকে যাওয়ার সময় বর্ণবাদ বিরোধী বিশ্ব তৈরির গভীর প্রত্যয় নিয়ে যাবেন।” তিনি আরো বলেন, “মর্যাদা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রচারের জন্য তারা যে কাজ করেছেন তা শুধু তাদের নিজেদের জনগোষ্ঠীর জন্যই নয়, বরং সবার কল্যাণ বয়ে আনবে। ”

Celebrating champions of equity and justice

অনুষ্ঠান চলাকালীন ব্লিঙ্কেন ছয়জন পুরস্কার বিজয়ী, যারা বিশ্বব্যাপী সাম্যের প্রচারে কাজ করছেন তাদের “অসাধারণ সাহস ও অঙ্গীকারের” প্রশংসা করেন।

আফ্রিকা

সাদিয়া মোসবাহ (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
সাদিয়া মোসবাহ

তিউনিসিয়ার আন্দোলনকর্মী সাদিয়া মোসবাহ তিউনিসিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে আইনী সুরক্ষার আওতায় আনতে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য মেমটি (“আমার স্বপ্ন”) প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে তিউনিসিয়ায় জাতিগত বৈষম্যকে অপরাধমূলক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

দক্ষিণ এশিয়া

সরস্বতী নেপালী

স্বরস্বতী নেপালী, নেপালের দলিত এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছেন। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন এবং জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরে দলিতদের উপাসনা করার অনুমতি দিতে, বাধ্যতামূলক শ্রম (ক্রীতদাস) বিলোপ, দলিত পরিবারের জমির অধিকার সুরক্ষিত করা এবং বৈষম্য সংক্রান্ত মামলার বিচারের রায় দলিতদের পক্ষে পেতে সফল হয়েছেন।

 

রানী ইয়ান ইয়ান (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
রানী ইয়ান ইয়ান

রানী ইয়ান ইয়ান চাকমা সার্কেলের একজন নেতা। তিনি বাংলাদেশের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা, জমি দখল এবং অন্যান্য ধরনের বৈষম্যের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এছাড়াও তিনি জলবায়ু সহিষ্ণুতাকে এগিয়ে নিতে এবং আদিবাসী নারী ও যুবাদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রচারণার কাজ করছেন।

Celebrating champions of equity and justice

ইউরোপ

ভিক্টোরিনা লুকা (স্টেট ডিপার্টমেন্ট
ভিক্টোরিনা লুকা

মোলদোভার মানবাধিকার আইনজীবী ভিক্টোরিনা লুকা রোমা অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে কাজ শুরু করেছেন এবং তিনি জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার অগ্রগতি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন৷ তিনি মোলদোভাতে রেডিও প্যাট্রিন পরিচালনা করেন, যা বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের সাথে রোমা ভাষা এবং সংস্কৃতি ভাগ করে নেয়।

দক্ষিণ আমেরিকা

কারি গুয়াজাজারা (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
কারি গুয়াজাজারা

কারি গুয়াজাজারা অবৈধ খনি খননকারী, কাঠ পাচারকারী ও চোরা বন্যপ্রাণি শিকারীদের হাত থেকে ব্রাজিলের অ্যামাজনকে রক্ষা করতে কাজ করেন। গুয়াজাজারা-তেনেতেহারা জাতিগোষ্ঠীর এই মানুষটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকারের অগ্রগতি এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল ও ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য কাজ করছেন।

 

অসওয়াল্ডো বিলবাও লোবাটন (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
অসওয়াল্ডো বিলবাও লোবাটন

কয়েক দশক ধরে অসওয়াল্ডো বিলবাও লোবাটন আফ্রো-পেরুভিয়ানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন। ১৯৯২ সালে পেরুর কৃষ্ণাঙ্গদের প্রথম সভা আয়োজনে সহায়তা করেছিলেন তিনি এবং ২০১৭ সালে পেরুর আদমশুমারিতে জাতিগত বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে প্রচারণা চালান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারি নীতির জন্য কাজ করেছেন।

ন্যায়ের পথে

পুরস্কার প্রাপ্তরা ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতকালে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ও বৈষম্য মোকাবেলার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার বিষয়গুলো ভাগ করে নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ফরেন পলিসি ফর আমেরিকা ফাউন্ডেশন পুরস্কার জয়ী প্রত্যেককে ৫,০০০ ডলার অনুদান দেবে।

অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ইয়ান ইয়ান বলেন, বর্ণবাদ ও জেনোফোবিয়া বা অন্য জাতিদে

র প্রতি ভীতি ও তাদেরকে অপছন্দ করার বিষয়টি রাতারাতি বদলানো যাবে না। এক্ষেত্রে অগ্রগতি শুধু তখনই আসবে যখন আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য প্রচেষ্টা ও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ইয়ান ইয়ান বলেন, এই পুরস্কার “আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আমাদের অর্জনের স্বীকৃতি।”

“ন্যায়বিচারের পথ কখনই সহজ ছিল না,” উল্লেখ করে ইয়ান ইয়ান বলেন, তবুও “আমরা এখানে আমাদের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি এবং আমরা পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের শক্তিশালী ও উন্নত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”