মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য অবারিত ইন্টারনেট থাকা দরকার

ইন্টারনেট ক্যাফেতে দুই জন ব্যক্তি বসে আছেন, একজন ল্যাপটপে কাজ করছেন, অন্যজন সেলফোনে কথা বলছেন (© ভাহেদ সালেমি/এপি ইমেজেস)
তেহরানে ২০১৯ সালে একটি ইন্টারনেট ক্যাফে। ইরানিদের সরকারি নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর উপায় অবশ্যই খুঁজতে হবে। সরকার জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবেশে বাধা তৈরি করছে। (© ভাহেদ সালেমি/এপি ইমেজেস)

বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অবাধ, নির্ভরযোগ্য ও সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২১ উইন্ডোহোক ঘোষণার ৩০ তম বার্ষিকীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; ১৯৯১ সালে নামিবিয়ার উইন্ডোহোক শহরে ইউনেস্কো আয়োজিত সেমিনারে একদল আফ্রিকান সাংবাদিক উইন্ডোহোক ঘোষণাপত্র তৈরি ও স্বাক্ষর করেছিলেন।

উইন্ডোহোক ঘোষণায় স্বাক্ষরের সেই তারিখটি ছিল মে মাসের ৩ তারিখ, যা পরবর্তীতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে পরিণত হয়েছিল।

ইউনেস্কো বিশ্বজুড়ে পরিবর্তিত গণমাধ্যমের প্রেক্ষাপটে উইন্ডোহোক ঘোষণার নীতিমালার মূল বক্তব্য — তথ্য জনকল্যাণের জন্য বিষয়টিতে পুনরায় জোর দিয়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে ইন্টারনেটকে অবারিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে এখনো অনেক দেশে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার অবাধ ও মুক্ত করার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।

ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও দমন বিভিন্নভাবে করা হয়। গণচীনে (পিআরসি) ইন্টারনেটে প্রকাশিত কমিউনিস্ট-বিরোধী ও সরকার-বিরোধী হিসেবে বিবেচিত শব্দ, বাক্যাংশ ও নামগুলো নিয়মিতভাবে সেন্সর করা হয়। এছাড়াও চীনে অনেক ওয়েবসাইটে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে।

এছাড়াও সরকারিভাবে গণমাধ্যমের সদস্যসহ অন্যদের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করা এবং নেটওয়ার্কের উপর বিধিনিষেধ আরোপ মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে। ভেনেজুয়েলায় সরকার তথ্যে প্রবেশাধিকারে বাধা দিতে এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিদ্যুত্‌ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়

কিউবায় সরকারি দমন ও নিপীড়ন সম্পর্কে যাতে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা প্রতিবেদন প্রচার করতে না পারে সে লক্ষ্যে সরকার দেশের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে

কমপিউটারের সামনে হাতে ধরা মোবাইল ফোন, যেখানে উভয় স্ক্রীণে সতর্কীকরণ বার্তা দেখাচ্ছে (© ওয়াং মায়ে-ই/এপি ইমেজেস)
উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ংয়ে ২০১৫ সালে কমপিউটার ও স্মার্টফোন উভয় স্ক্রীণে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা যাচ্ছে, যেখানে বলা হয়েছে “সতর্কীকরণ! আপনি এই ওয়েবসাইটে সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন না কারণ এই সাইটটি কালো তালিকাভুক্ত”। (© ওয়াং মায়ে-ই/এপি ইমেজেস)

অ্যাক্সেস নাউ এবং ফ্রিডম অনলাইন কোয়ালিশন এর মতো সংস্থাগুলো ইন্টারনেটের অবারিত ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি করার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে।

ফ্রিডম অনলাইন কোয়ালিশন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩২টি দেশের সরকারের একটি জোট যা স্বাধীন ও অবারিত ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠা সমর্থন করা ছাড়াও সর্বত্র ও সকলের জন্য অনলাইনে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা, সংগঠিত ও সমবেত হওয়া এবং গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

ফ্রিডম অনলাইন কোয়ালিশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে “এমন একটা সময়, যখন ইন্টারনেটে দমন বাড়ছে এবং এর সাথে সম্পর্কিত নীতিগত বিষয়গুলো সর্বাধিক আলোচিত আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর অন্যতম বিষয়ে পরিণত হয়েছে, তখন অনলাইনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে জোটের (ফ্রিডম অনলাইন কোয়ালিশন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”

অ্যাক্সেস নাউ বিশ্বজুড়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) যারা সর্বত্র অবারিত ইন্টারনেটের পক্ষে কথা বলে ও কাজ করে। ২০২০ সালে তাদের প্রকাশিত কিপ ইট অন প্রতিবেদনে [পিডিএফ, ৬ মেগাবাইট] বিশ্বজুড়ে ১৫৫ বার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল জানানো হয়েছে, যা নাগরিকদের তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং মুক্ত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ ছিল।

এই এনজিও-র ২৪/৭ হটলাইনে পৃথিবীর যেকোন মহাদেশের (অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া) অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষাকারী কর্মী ইন্টারনেট দমন সংক্রান্ত তথ্য জানাতে পারেন ও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন।

অ্যাক্সেস নাউ-এর মতে, “বিগত ১০ বছরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানবাধিকারের সকল ক্ষেত্রে সামর্থ্য গড়ে তোলা, কার্যক্রম পরিচালনা করা ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।” তারা আরো বলেছে যে, “নতুন প্রযুক্তি আসা মাত্র এর সমাধানে কাজ করার জন্য এবং মানবাধিকারের উপর এর প্রভাবগুলো তুলে ধরার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।”