
ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একজন বিশিষ্ট সমালোচকের পক্ষে সমর্থন দেওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে একজন বই প্রকাশককে তিন বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত করে চীনা সরকার। দলটি জানুয়ারিতে হংকংয়ে বেশ কিছুসংখ্যক রাজনীতিক এবং গণতন্ত্রপন্থীকে গ্রেপ্তার করার পরেগেং শিয়াওনান নামে ওই প্রকাশককে এ সাজা দেয়।
কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বাক স্বাধীনতাকে দমন করে।
২০০৯ সালের নভেম্বরে ইরানের সরকার এক গণবিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় ও দেড় হাজারের বেশি প্রতিবাদকারীকে হত্যা করে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ একসময় সরকারি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়।
ইরানের শাসকরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের প্রতিবাদকারী সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নারীদেরও প্রায়ই কারাগারে পাঠায় । চীনের শাসকরা শিনজিয়াং ও তিব্বতে তাদের দমনমূলক নীতি বা অন্যান্য কর্তৃত্ববাদী আচরণের সমালোচনা করা চলচ্চিত্র, সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে সেন্সর করে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে সুরক্ষা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের অন্যতম বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বাকস্বাধীনতাকে “মুক্ত সরকারের মূল স্তম্ভ” বলে অভিহিত করেছিলেন। তার উপলব্ধি ছিল, বাক স্বাধীনতা ছাড়া ‘একটি মুক্ত সমাজের কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং তার ধ্বংসস্তূপের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় স্বৈরতন্ত্রের ভিত।’
বাক স্বাধীনতার সুরক্ষা সমাজকে এগিয়ে নেয়
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে নাগরিকদের সরকারি দমন কিংবা বিধিনিষেধ ছাড়া কথা বলার অধিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ধর্ম, সংবাদপত্র ও সমাবেশের স্বাধীনতা এবং অভিযোগের প্রতিকারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার অধিকার।
এই পাঁচটি স্বাধীনতা নাগরিকদের সমাজে সম্পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ, স্বশাসন, নির্বাচিত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করানো, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করা, এমনকি সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেয়।
২০২০ সালের ২৫ মে, মিনিয়াপোলিসে আইন প্রয়োগকারীদের হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার পর ব্যাপক প্রতিবাদের ঘটনা দেশব্যাপী গণবিক্ষোভের সূত্রপাত করে। এর জেরে নাগরিকদের সুরক্ষা এবং সব আমেরিকানের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশী সংস্কারের সূচনা হয়।

১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বক্তব্য হাজারো মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে সমান অধিকারের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এসব শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন পাস করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। ওই আইনে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য করা নিষিদ্ধ করা হয়।
নাগরিক অধিকার আন্দোলন বাক স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় অনুশীলনগুলোর অন্যতম। তবে আমেরিকানরা প্রতিদিনই এটি চর্চা করে।যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের স্থানীয় এলাকা, অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সরকারের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এর অনুশীলন করে। শুধু হোয়াইট হাউসই প্রতিদিন নাগরিকদের হাজার হাজার চিঠি এবং ইমেল পায়।