ইতোপুর্বে ব্রডওয়ে হ্যামিলটন-এর মতো কিছু দেখেনি ।
এই র্যাপ ও হিপ-হপ মিউজিক্যালটির বিষয়বস্তু আলেক্সান্ডার হ্যামিলটনের জীবন ও মৃত্যু, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের হতদরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে আসা এক অনাথ – অভিবাসী থেকে তিনি কিভাবে রেভ্যুলুশনারি ওয়ারে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অগ্রদূত হয়ে ওঠেন এবং হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ট্রেজারি সেক্রেটারি। এই মিউজিক্যাল রেকর্ড সংখ্যক ১৬টি টনি অ্যাওয়ার্ড মনোনয়ন পেয়েছে এবং জিতেছে ১১টি পুরস্কার।
মঞ্চের দর্শক, যাদের বেশিরভাগই শৈশবে পাঠ্যবই থেকে দেশের জন্মদাতাদের কথা জেনেছিলো — আজ নতুন অভিজ্ঞান লাভ করলো। হ্যামিলটন-এর সকল প্রধান প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে বিভিন্ন বর্ণের শিল্পীরা। (প্রতিষ্ঠাতারা, যদিও শ্বেতাঙ্গ ছিলেন। কেউ কেউ ক্রীতদাস রেখেছেন। এদের কেউ র্যাপ শিল্পী ছিলেন না।)

তবে যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকে অনেক কিছুই বদলে গেছে। লেখক, সুরকার ও তারকা হিসেবে পুয়ের্তোরিকান বংশভুত লিন-মানুয়েল মিরান্ডা বলেন, “আমাদের শিল্পীদের তালিকাটিই আমেরিকার প্রতিচ্ছবি।”
আপনি ১০ ডলারের বিনিময়ে আমেরিকার ইতিহাস বিষয়ক পড়াশোনায় অংশ নেওয়া ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ না হলে টিকেট পাওয়া দুষ্কর। বর্ণ বৈচিত্রের জন্য যেসব স্কুলকে নির্বাচিত করা হয়েছে, সেগুলোর টিকেটের ব্যয়ভার বহন করছে রকফেলার ফাউন্ডেশন। (মঞ্চের নিবেদিতপ্রাণ দর্শকেরা আরো অনেক অনেক বেশি ব্যয় করছেন।)
হ্যামিলটন দ্য রেভ্যুলিউশন বইতে এই মিউজিক্যালের চিত্রনাট্য এবং এটি নির্মাণের গল্পের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, সেটির সহ-লেখক জেরেমি ম্যাককার্টার লিখেছেন, এই নাটকের সাফল্য “আমাদের প্রতিষ্ঠাতাদের কাহিনি বলছে, সেই কথককে বদলে দিয়েছে [এবং] আমাদের চোখের সামনে একঝলক মেলে ধরেছে আমাদের দিকে ছুটে আসতে থাকা নতুন, আরো বর্ণবৈচিত্রময় আমেরিকাকে।”
বৈচিত্র্যের নাট্যায়ন:
হ্যামিলটন ব্রডওয়েতে বর্ণবৈচিত্রের কথা তুলে ধরা একমাত্র নাটক নয়। টনি অ্যাওয়ার্ডের জন্য ৪০টি মনোনয়নের মধ্যে ১৪টিই গেছে আফ্রিকান-আমেরিকান, হিস্পানিক অথবা এশিয়ান-আমেরিকান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ঘরে। অশ্বেতাঙ্গ চার জন অভিনেতা-অভিনেত্রী সেরা মিউজিক্যালের পুরস্কার জিতেছেন, তাদের মধ্যে তিনজন পেয়েছেন হ্যামিলটন-এ অভিনয়ের জন্য।
মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণকারী কেনিয়ান অভিনেত্রী লুপিটা নিয়োনগো মনোনয়ন পেয়েছে এক্লিপসড নামে একটি নাটকের জন্য, যেটির বিষয়বস্তু লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের কবল থেকে এক নারীর বাঁচার সংগ্রামের কাহিনি। লুপিটা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, “যে বর্ণবৈচিত্রময় দর্শক নাটক দেখতে আসে, আমি তাদের দেখি…এবং এই গুরুত্বপূর্ণ গল্পটি বিশ্ববাসীকে জানানোর অংশ হতে পেরে আমার গর্ব হয়।“

রক মিউজিক্যালের পুনর্জাগরন ঘটানো স্প্রিং অ্যাওয়েক্যানিং-এ অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী মার্লি ম্যাটলিন ও অন্যান্য বধির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, যারা তাদের অভিনয় করেছেন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে। এই মিউজিক্যাল তিনটি টনি মনোনয়ন অর্জন করেছে। (হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী পক্ষাঘাতগ্রস্ত অভিনেতা আলি স্ট্রোকারের ব্রডওয়েতে এটিই প্রথম অভিনয়।)
নাটকে এই বর্ণবৈচিত্রের সঙ্গে মিল নেই চলচ্চিত্র শিল্পের। সেখানে সম্প্রতি সেরা অস্কার মনোনয়নগুলো দেওয়া হয়েছিল শুধু শ্বেতাঙ্গ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের, যার পরিণতিতে এই আসর বর্জন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছিল। টনি পুরস্কারের ঘোষণার প্রশংসা করা হয় বিনোদন জগতের পত্রিকা ভ্যারাইটি ‘তে। সেখানে হলিউডের প্রতি কটাক্ষ করা হয় অনেকটা স্পষ্টভাবেই।
#TonyAwards could rebuke #OscarsSoWhite with historic wins https://t.co/JDTHKvjUvg pic.twitter.com/RtAsdHwd7L — Variety (@Variety) May 3, 2016
১৩টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিল হ্যামিলটন, যার ১১টিতে এটি পুরস্কার জেতে। ২০০১ সালে দ্য প্রোডিউসার-এর এক ডজন পুরস্কার জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করা থেকে এটি একটি পুরস্কার দূরে ছিল। সঙ্গীত নির্মাণ ও গীতিকার হিসেবে এবং কাহিনি লেখার জন্যে দুটি টনি পুরস্কার জেতেন মিরান্ডা। তবে সেরা অভিনেতার প্রতিযোগিতায় আর চরিত্রটি আবারও পরাজয় মানে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যারন বারের কাছে, যিনি এক ডুয়েলে হ্যামিলটনকে হত্যা করেন। সহ-অভিনেতা লেসলি ওডোম জুনিয়র এই পুরস্কার জেতেন।