ফিরে দেখা: নির্বাহী আদেশ দিয়ে প্রেসিডেন্টরা কীভাবে ইতিহাস রচনা করেছিলেন

(© ইভান ভূচি/এপি ইমেজেস)
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে তার প্রথম নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছেন। (© ইভান ভুচি/এপি ইমেজেস)

প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর অফিসের প্রথম ঘণ্টাগুলোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কোভিড-১৯ মোকাবেলা করা, ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্ণ বৈষম্যসহ তার প্রশাসনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারগুলোর সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

তার গৃহীত কয়েকটি ব্যবস্থাকে নির্বাহী আদেশ বলে। বাকিগুলো হোয়াইট হাউজ কিংবা প্রেসিডেন্টসিয়াল মেমোরেন্ডা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তাহলে এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?

নির্বাহী আদেশ বনাম মেমোরেন্ডা

নির্বাহী আদেশ এবং মেমোরেন্ডা উভয়ই ফেডারেল কর্মীদের উপর “ফোর্স অব ল” বা আইনের বল হিসেবে পরিচিত। অন্য কথায়, এর কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রেসিডেন্ট কর্তৃক স্বাক্ষরিত আইনের সমান ক্ষমতা রয়েছে।

তবে পার্থক্যও রয়েছে।

নির্বাহী আদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের সরকারি দলিলপত্র যা ফেডারেল রেজিস্টারে সংখ্যাক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ/প্রকাশিত থাকে। মেমোরেন্ডা ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশ করার দরকার হয় না।

নির্বাহী আদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বা কোন আইনের ভিত্তিতে জারি করা হয়েছে তা অবশ্যই চিহ্নিত করতে হয়। এই আদেশ বাস্তবায়ন বা সম্পাদনের ব্যয়ও অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু মেমোরেন্ডাতে খরচ উল্লেখ করার দরকার হয় না, যদি না এটি সম্পাদনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয়।

একজন ছাড়া প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট তাদের মেয়াদকালে নির্বাহী আদেশ ও মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। ব্যতিক্রম হলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, যিনি মাত্র একমাস দায়িত্ব

পালনের পর মারা গিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালনকারী একমাত্র প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট ৩,৭২১টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যা অন্য যে কারো চেয়ে বেশি। এর বেশিরভাগ মহামন্দা মোকাবেলা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশকে সহায়তা করার লক্ষ্যে জারি করা হয়েছিল।

কিছু নির্বাহী আদেশ ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। এখানে এমন কয়েকটি সর্বাধিক বিখ্যাত নির্বাহী আদেশের কথা উল্লেখ করা হলো:

মুক্তির ঘোষণা

আব্রাহাম লিঙ্কনের প্রাথমিক মুক্তির ঘোষণা নিউইয়র্ক স্টেট ক্যাপিটলে প্রদর্শিত হচ্ছে। (© এপি ইমেজেস)

প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তির ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় এমন স্টেটগুলোতে বসবাসকারী সকল দাসকে মুক্তি দেয়া হয়। দক্ষিণের স্টেটগুলো যেহেতু ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং ইউনিয়ন ত্যাগ করেছিল সে কারণে ওই স্টেটগুলোতে এই আদেশের তাত্‌ক্ষণিক প্রভাব পড়েনি। তবে এই আদেশের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়েছিল যে উত্তরের স্টেটগুলোতে পালিয়ে যাওয়া দাসদের সবাই মুক্ত।

দ্য নিউ ডিল

প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে হোয়াইট হাউজে একটি বিলে স্বাক্ষর করছেন। (© এপি ইমেজেস)

মহামন্দা চলাকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে এক নির্বাহী আদেশ বলে সিভিল ওয়ার্কস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তৈরি করেন। যার মাধ্যমে দেশে নতুন ৪০ লাখ সরকারি চাকরি তৈরি করা হয়েছিল। এরপর ১৯৩৪ সালে আরেক নির্বাহী আদেশে তিনি দেশের অনুন্নত পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুত্‌ সুবিধা পৌঁছে দিতে রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গঠন করেন।

সামরিক বাহিনী বর্ণবিভেদমুক্ত করা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান এক নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিগত বাধার অবসান ঘটান। আদেশের কথাগুলো সহজ ছিল: “সামরিক বাহিনীতে জাতি, বর্ণ, ধর্ম কিংবা জাতীয় উত্‌স নির্বিশেষে সকলে সমান ব্যবহার ও সুযোগ পাবে।” এই আদেশ জারির আগে সামরিক বাহিনীগুলো জাতি দ্বারা বিভক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ পেতো, কাজ করতো, এমনকি যুদ্ধ করতো।

সময়ের ধারক
হাজার হাজার নির্বাহী আদেশ ও মেমোরেন্ডার মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক এখানে উল্লেখিত আদেশ ও মেমোর মতো এতোটা ঐতিহাসিক। তবে সকল নির্বাহী আদেশ ও মেমোরেন্ডা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের মতামত প্রকাশ করে এবং তিনি যে মেয়াদকালে দায়িত্ব পালন করেছেন সেই সময়ের গভীরে দেখতে সহায়তা করে।

এই নিবন্ধটি ভয়েস অব আমেরিকা গল্প থেকে অভিযোজিত এবং শেয়ারআমেরিকাতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।