
বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক শ্রম বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই দেশটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে অবস্থান করে কার্যক্রম চালানো মাছধরার বহর থেকে পণ্য কেনে না।
ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) কর্তৃপক্ষের বছরব্যাপী এক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে, চীনভিত্তিক দালিয়ান ওশান ফিশিং কোম্পানির কাজে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জোরপূর্বক শ্রম বিষয়ক ১১টি সূচকের সবগুলোর নজির পাওয়া গেছে (পিডিএফ,৪.২ এমবি)। গত ২৮ মে সিবিপি যুক্তরাষ্ট্রে দালিয়ান কোম্পানির পণ্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
সিবিপি স্থগিত বেতন, নিম্নমানের বসবাস ব্যবস্থা ও শারীরিক সহিংসতার মতো নানা সূচকের কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন প্রমাণ দেখিয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেহান্দ্রো এন মেয়রকাস বলেছেন, ‘‘যেসব কোম্পানি কর্মীদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই।’’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘সিবিপির নির্দেশনা দূর সাগরের মৎস্য শিল্পে কর্মরতদের মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের অব্যাহতভাবে কাজ করা নিশ্চিত করবে।’’
ওই মৎস্যশিকার বহরের বেশিরভাগ কর্মী ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো বিভিন্ন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের নাগরিক।
.@CBP announced restrictions on seafood products from the PRC-based Dalian Ocean Fishing Company due to evidence of its involvement in forced labor. The international community must combat forced labor wherever it occurs, including in the fishing industry. https://t.co/Fnj8qlgvKm https://t.co/qNrI6zo2UD
— Ned Price (@StateDeptSpox) May 28, 2021
নেড প্রাইস টুইট: জোরর্পূবক শ্রমের প্রমাণ পাওয়ায় সিবিপি চীনের দালিয়ান ওশান ফিশিং কোম্পানির সীফুড পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মাছধরা খাতসহ যেখানেই জোরর্পূবক শ্রমের ঘটনা ঘটুক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তা অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। go.usa.gov/x6CV6
সিবিপি টুইট: মাছধরা কার্যক্রমে জোরর্পূবক শ্রম ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয় এমন তথ্যের ভিত্তিতে সিবিপি দালিয়ান ওশান ফিশিং কোম্পানির বিরুদ্ধে উইথহোল্ড রিলিজ অর্ডার জারি করেছে। কোম্পানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে শারীরিক সহিংসতা, বেতন বাকি রাখা এবং কাজের ও থাকার খারাপ পরিবেশ।go.usa.gov/x6CV6
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী দণ্ডিত, জোরপূর্বক ও দাসমূলক শ্রমে নিয়োজিতদের মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে উৎপাদিত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করতে কোম্পানিগুলোকে তাদের সরবরাহ চেইন পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। সমস্যাটি যাতে উৎসেই বন্ধ করা যায় সে লক্ষ্যেও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত জানুয়ারি মাসে সিবিপি জোরপূর্বক শ্রমের প্রমাণ পাওয়ায় চিনের শিনজিয়াং অঞ্চলের সব তুলা ও টমোটোজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইতে একই কারণে সিবিপির কর্মকর্তারা শিনজিয়াং থেকে আসা মানুষের চুলের তৈরি ১৩ টন পণ্য আটক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও শ্রম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে চীনের সরকার শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দশ লাখের বেশি মানুষকে আটক রেখেছে। এদের অনেককেই জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তরের শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের ২০২০ সালের তালিকায় (লিস্ট অব গুডস প্রডিউস্ড বাই চাইল্ড অর ফোর্সড লেবার ) দেখা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে ১৭টি পণ্য উৎপাদনে জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহৃত হয়। এ সংখ্যা বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদের অধিকার সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গেও কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তিতে জোরপূর্বক শ্রমে উৎপাদিত পণ্য উত্তর আমেরিকাতে আমদানি নিষিদ্ধ করে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অবৈধ, অপ্রকাশিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্যশিকারে (আইইউইউ) আংশিকভাবে হলেও অবদান রাখা ভর্তুকি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আলোচনা চলছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় ২৬ মে সব দেশের প্রতি মাছ ধরার জাহাজগুলোতে জোরপূর্বক শ্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করে। এতে বলা হয় অবৈধ, অপ্রকাশিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্যশিকারের (আইইউইউ) সঙ্গে অনেক সময়ই জোরপূর্বক শ্রমের সম্পর্ক থাকে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস ২৮ শে মে বলেন, “যারা মুনাফার জন্য মানুষকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক শ্রমে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।…যাদের কণ্ঠ কেউ শোনে না তাদের কথা শোনা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করব। ”
জোরপূর্বক শ্রমের ঝুঁকি আছে এমন পণ্য ও শিল্পখাত সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য এই ঠিকানায় যান: www.ResponsibleSourcingTool.org.