টীকা কীভাবে কাজ করে

দস্তানা বা গ্লাভস পরিহিত হাত দিয়ে ইঞ্জেকশন দেয়া হচ্ছে (© টেড এস. ওয়ারেন/এপি ইমেজেস)
সিয়াটলের কাইসার পার্মানেন্টে ওয়াশিংটন হেলথ রিসার্চ ইন্সটিটিউটে নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য টীকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় এক রোগী টীকা নিচ্ছেন। (© টেড এস. ওয়ারেন/এপি ইমেজেস)

বিশ্বব্যাপী মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯’র এক বা একাধিক টীকা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই টীকা কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রার্থী টীকা প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা করে আশাবাদ দেখা গেছে। এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার মাধ্যমে দেখা হচ্ছে সেই টীকাগুলো মানবদেহে নিরাপদ ও কার্যকর কিনা।

টীকা ১০১

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এইচআইভি কর্মসূচীর হেনরি এম জ্যাকসন ফাউন্ডেশন কার্যক্রম এবং কোভিড-১৯’র কয়েকটি টীকার পরীক্ষা সম্পন্নকারী ওয়াল্টার রিড ইন্সটিটিউট অফ রিসার্চ-এর নতুন সংক্রামক রোগ শাখার পরিচালক সন্ধ্যা ভাসান বলেন, “টীকা কাজ করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে।”

তিনি বলেন, “টীকা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমন কিছুর সংস্পর্শে এনে দেয় যা দেখতে যে রোগ-জীবাণু বা প্যাথোজেনকে আমরা প্রতিরোধ করতে চাই ঠিক সেরকম। সেই বিশেষ রোগ জীবাণু বা প্যাথোজেনকে লক্ষ্য করে আপনার শরীর এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে এবং তার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সুনির্দিষ্ট এন্টিবডি তৈরি করে। পরে আপনি যখন আসল রোগ-জীবাণুর সংস্পর্শে আসেন তখন আপনার শরীরের স্মৃতি জেগে ওঠে এবং সেই রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ার জন্যে আগে থেকেই সতর্ক থাকে।”

বিভিন্ন রোগের জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের টীকা তৈরি করে থাকেন। কিছু রোগ যেমন হাম, জল বসন্ত ও ইয়োলো ফিভার ইত্যাদির জন্য তাঁরা উক্ত রোগ-জীবাণু বা প্যাথোজেন তথা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য সংক্রামক জীবাণুর মধ্যে থেকে কোন দুর্বল (বা ক্ষয়প্রাপ্ত) জীবাণু ব্যবহার করেন। অন্যান্য টীকা যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধের ইঞ্জেকশন তৈরি করা হয় মৃত (নিষ্ক্রিয়) জীবাণু দিয়ে। বিগত কয়েক দশকে পোলিও টীকা তৈরিতে ক্ষয়প্রাপ্ত জীবাণু ব্যবহার থেকে সরে এসে নিষ্ক্রিয় জীবাণু ব্যবহার প্রচলন ঘটেছে।

অন্যান্য দু’টি সাধারণ পন্থা হলো রোগ প্রতিরোধে সাড়া জাগাতে জীবাণুর শরীরের টুকরো ব্যবহার অথবা উক্ত জীবাণু সৃষ্ট ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান টক্সিন ব্যবহার করা।

করোনাভাইরাসের টীকা

নতুন করোনাভাইরাসের টীকা উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন পন্থা খুঁজে দেখছেন। ভাসান বলেন, “প্রযুক্তি বিকাশে দারুণ কিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে যার দ্বারা আমরা বিভিন্ন পন্থায় টীকা তৈরি করতে পারি যা হবে আরো নিরাপদ, সহজ এবং ব্যাপক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী। নিচে এর তিনটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো:

  • তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা অন্যতম করোনাভাইরাস টীকায় বার্তাবাহক বা মেসেঞ্জার আরএনএ নামক জৈব উপাদান ব্যবহৃত হয় যার দ্বারা কোষগুলোকে মানব দেহের মধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয় যাতে এটা পরে আসল ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করতে পারে।
  • তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় পন্থা হলো পুনরুৎপাদনে অক্ষম ভাইরাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের জিন প্রবেশ করানো। এর ফলে করোনাভাইরাসের প্রোটিন তৈরি হবে এবং রোগ প্রতিরোধে সাড়া ‍দিতে সক্ষম হবে।
  • তৃতীয় পন্থাটিতে পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাসের প্রোটিন তৈরি করা হয় এবং সেটাকে টীকার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োগ করা হয় যাতে সেটা রোগ প্রতিরোধে সাড়া দেয়।

শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়েসে একটি করোনা টীকার তৃতীয় ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনাকারী রিচার্ড এম নোভাক বলেন, “সব ডিম এক ঝুঁড়িতে রাখার চিন্তাটা ভালো কিছু নয়। তার চেয়ে বরং বিভিন্ন রকম চেষ্টা নেয়া ভালো।”

ভাসান বলেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সম্ভাব্য টীকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং “এই প্রক্রিয়াটিকে যথাসম্ভব স্বচ্ছ করার প্রচেষ্টা এই উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

এ নিবন্ধটি রচনা করেছেন স্বতন্ত্র লেখক লিন্ডা ওয়াং।