
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ক্রমহ্রাসমান মত্স্য সম্পদ ও বিশ্বব্যাপী জেলেদের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য অবৈধভাবে মাছ ধরা মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও বাণিজ্য বিভাগসহ আরো অনেকগুলো ফেডারেল এজেন্সি মিলে গত জুন মাসে একটি আইন বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে “পুরো-সরকার-একসঙ্গে” (“whole-of-government”) কৌশলকে এগিয়ে নেয়া যাবে।
গত ডিসেম্বরে প্রণীত মেরিটাইম সিকিউরিটি অ্যান্ড ফিশারিজ এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশ্বের যে সকল অঞ্চলে অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা চলছে সেখানে এই ধরনের তত্পরতা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৭ মে এক নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে তাঁর দেশের লড়াই করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং এ লক্ষ্যে জোরদার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা আমেরিকান ও বৈশ্বিক সামুদ্রিক খাবারের মজুদের স্থায়িত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, এবং বিশ্বজুড়ে আইনমান্যকারী জেলে ও সামুদ্রিক খাদ্যশিল্পের পণ্যগুলোর সাথে অন্যায়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করছে।”
এই আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে অবৈধভাবে ধরা মাছ বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ রোধে প্রণীত ও ৬৫টিরও বেশি আন্তর্জাতিক অংশীদার কর্তৃক স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার “পোর্ট স্টেট মেজারস টু প্রিভেন্ট, ডিটার অ্যান্ড ইলিমিনেট ইলিগ্যাল, আনরিপোর্টেড অ্যান্ড আনরেগুলেটেড ফিশিং” চুক্তি বাস্তবায়ন জোরদার করতে বলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের এই আদেশ অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের লড়াই প্রচেষ্টারই ফসল, যার কারণে কাজ কিংবা খাদ্যের জন্য মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিগ্রস্ত।

ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বিশ্বব্যাপী টেকসই মাছ ধরা ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ১৫টি দেশে ৩৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে থাকে।
গত অক্টোবরে, ইউএসএআইডি প্যাসিফিক আইল্যান্ড দেশগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক এলাকায় অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করার জন্য ৭.৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও ইউএসএআইডি ফিলিপাইনের জেলেদের সহায়তা করতে মনিটরিং সরঞ্জাম দিয়েছে যা ব্যবহার করে তারা প্রমাণ করতে পারে যে, তাদের ধরা মাছ বৈধ এবং এর ফলে তারা তাদের ধরা মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয় করা নিশ্চিত করতে পারছে।
তারপরও অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার সমস্যাটি রয়েই গেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আনুমানিক হিসেব মতে, প্রতিবছর প্রায় ২৬ মিলিয়ন টন মাছ অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত পন্থায় ধরা হচ্ছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে লাইসেন্স ছাড়া মাছ ধরা, নির্ধারিত আকারের চেয়ে ছোট মাছ ধরা কিংবা বিলুপ্তপ্রায় বা হুমকিতে থাকা প্রজাতির মাছ ধরা, কিংবা অননুমোদিতভাবে বড় মালবাহী জাহাজে মাছ স্থানান্তর করা।
গত আগস্ট মাসে ইকুয়েডর ২৬০টি জাহাজের এক বহরের বিরুদ্ধে তাদের আপত্তি জানিয়েছিল, বেশিরভাগ চীনা এই জাহাজগুলো গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কাছে বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমের অধিকারী এলাকায় মাছ ধরছিল। ২০১৭ সালে ইকুয়েডর গ্যালাপাগোস সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় একটি চীনা জাহাজকে জব্দ করেছিল, যা ৩০০ টন বন্যপ্রাণী বহন করছিল, যাদের বেশিরভাগ হাঙ্গর ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইকেল আর. পম্পেও গত ২ আগস্ট অবৈধ মত্স্য শিকারী এবং উপকূলীয় দেশগুলোর সার্বভৌম অধিকার ও এখতিয়ার লংঘনকারী মাছ ধরার জাহাজগুলোকে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৫ জুন অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড এটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) ফিশারিজ-এর কর্মকর্তাগণ বলেন যে, বিশ্বের অনেক দেশ অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ করতে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করেছে।
এনওএএ-এর ইন্টারন্যাশনাল ফিশারিজের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড্রিউ লোলার বলেছেন, “সুসংবাদটি হলো বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর মত্স্য শিকার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসমূহ তাদের আভ্যন্তরীণ মাছ ধরার জাহাজসমূহের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে, আমাদের কাজের অগ্রগতি হলেও এখনো অনেক কাজ করা বাকি আছে।”