রাজনীতিবিদদের প্রতি সাংবাদিকদের আহ্বান: সত্যের সাথে থাকুন (ভিডিও)

“মিথ্যাবাদী! মিথ্যাবাদী! তোমার প্যান্টে আগুন!” শিশুরা এভাবেই নিজেদের মধ্যে কেউ মিথ্যা বললে তার উদ্দেশ্যে বলে।

এখন সংবাদ ও ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই অবস্থায় রাজনীতিবিদদের সত্য লুকানো বা ঘটনা অসাধুভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা সম্পর্কে আমাদেরকে জানানোর জন্য আগের চেয়েও আরো বেশি সাংবাদিক রয়েছেন।

সাংবাদিকতার এই ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রটিকে বলা হয় পলিটিক্যাল ফ্যাক্ট চেকিং বা রাজনৈতিক সত্যানুসন্ধান।

এ প্রসঙ্গে পলিটিফ্যাক্ট এর সম্পাদক অ্যাঞ্জি ড্রোবনিক বলেন, “আমরা ঘটনা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখি, আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলি, আমরা আর্কাইভ করা নিউজ কাভারেজটি পর্যালোচনা করি।” এভাবে বিস্তারিতভাবে তদন্ত শেষে সত্য যাচাইকারীরা তাদের মতামত দেন বা রেটিং করেন — কোন রাজনীতিবিদরা সত্য বলছেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে কারা ঘটনাকে বাড়িয়ে বলছেন, এবং রাজনীতিবিদদের কাউকে কাউকে তারা শিশুদের মিথ্যাবাদী চিহ্নিত করার মতো করেই “তোমার প্যান্টে আগুন” বিশেষণে রেটিং করেন; অর্থাত্‌ ওই রাজনীতিবিদ মিথ্যা বলছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের ফ্যাক্ট চেকার রাজনীতিবিদদের বক্তব্যগুলোর সঠিকতা ও নির্ভুলতা যাচাই করার জন্য

পিনোকিও পুতুল (শাটারস্টক)
কেউ একজন মিথ্যা বলছে। (শাটারস্টক)

শিশুতোষ গল্পের চরিত্র “পিনোকিও” অনুসরণে এক থেকে চার এর ব্যাপ্তিকে ব্যবহার করছে। পিনোকিও গল্পে দেখা যায় প্রতিবার মিথ্যা বললে পুতুলের নাক একটু বাড়ে। ফ্যাক্ট চেকার রাজনীতিবিদদের বলা বক্তব্যকে একটি থেকে চারটি পিনোকিও পুতুল দিয়ে প্রকাশ করেন, যেখানে একটি পিনোকিও মানে সত্যকে লুকানো হয়েছে এবং চারটি পিনোকিও মানে ডাহা মিথ্যা কথা বলা হয়েছে।

“রাজনীতিবিদরা প্রায়শই প্রতিশ্রুতি দেবেন,” উল্লেখ করে ফ্যাক্ট চেকারের রচয়িতা গ্লেন কেসলার বলেন, “আপনি এই প্রতিশ্রুতিগুলোর তালিকা তৈরি করে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন কিনা দেখতে পারেন। ফ্যাক্ট চেকিং বা সত্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এটিকে বলে প্রমিজ চেকিং বা প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে দেখা।”

পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেনবার্গ পাবলিক পলিসি সেন্টারের একটি প্রকল্প ফ্যাক্টচেক ডট অর্গ নিজেকে ভোটারদের জন্য কনজুমার এডভোকেট বা “ভোক্তার আইনজীবী” মনে করে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে শঠতা এবং বিভ্রান্তির মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাক্টচেকের কাছে কোন দাবী বা বক্তব্য মিথ্যা মনে হলে ওই খবরের উপর ইংরেজিতে বড় হরফে “ফেইক” লিখে দেয়া হয়।

সত্যানুসন্ধান কাজের সাথে যুক্ত সকলেই জোর দিয়ে বলেছেন যে, ভোটারদের অবশ্যই অনলাইনে দেখা ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শোনা দাবীগুলোর ব্যাপারে সন্দেহপ্রবণ হওয়া উচিত্‌।

পলিটিফ্যাক্ট সম্পাদনা করার সাত বছর পর বিল অ্যাডায়ের এখন নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে “ডিউক রিপোর্টার্স ল্যাব” চালু করেছেন, যেখানে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সত্যানুসন্ধানে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। ল্যাবের রিপোর্ট অনুযায়ী ৩৭টি দেশে ৯৬টি সত্যানুসন্ধান সংস্থা কাজ করছে, যা ২০১৫ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। সত্যানুসন্ধানের কাজ হচ্ছে এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, দক্ষিন কোরিয়া, তিউনেসিয়া ও ইউক্রেন।

পলিটিফ্যাক্টের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডায়ের রাজনৈতিক বিষয়ের সত্যানুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান চিহ্নিত করেছেন:

নির্দলীয় সত্যানুসন্ধানকারী: “মানুষ জিজ্ঞাসা করে ‘আপনি কি একজন ভালো কনজারভেটিভ সত্যানুসন্ধানকারীকে দিতে পারেন?’ আমি সবসময় বলি এমনটা হতে পারে না (ভালো কনজারভেটিভ কিংবা), ভালো লিবারেল সত্যানুসন্ধানকারী নেই,” এভাবেই নির্দলীয় সত্যানুসন্ধানকারীর বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন অ্যাডায়ের।

স্বাধীন গণমাধ্যম: অ্যাডায়ের বলেন, “সাংবাদিকরা যখন স্বাধীনভাবে যা লেখা দরকার লিখতে পারবে, আমি মনে করি তখন প্রত্যেককে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সুবিধা হবে।”