প্রতিবছর আমাদের মধ্যে ৩৪০ কোটি মানুষ সংক্রামিত মশা দ্বারা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
কিন্তু এই পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পোকামাকড়ের নিজের ডিএনএ ব্যবহার করে মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি বৈপ্লবিক উপায় খুঁজে বের করেছেন।
কীভাবে? গবেষক অ্যান্থনি জেমস, ইথান বিয়ার ও ভ্যালেন্টিনো গ্যান্টজ যৌথভাবে গবেষণার মাধ্যমে সিআরআইএসপিআর (ক্লাস্টার্ড রেগুলারলি ইন্টারস্পেসড শর্ট প্যালিনড্রোমিক রিপিটস) নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করে মশার জিন সম্পাদনা করে জিন পরিবর্তন করার কৌশল আবিষ্কার করেছেন। তারা মশার শরীরের নির্দিষ্ট জেনেটিক উপাদানকে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী পরজীবীকে মেরে ফেলে। আরো ভালো সংবাদ হলো, যে মশাগুলোর জিন পরিবর্তন করে দেয়া হয়, সেই মশাগুলোর বংশধরদের শরীরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী জিনগুলো অব্যাহত থাকে। ফলে একসময় এই পরিবর্তিত জিন ম্যালেরিয়া ছড়ানোর জন্য দায়ী সকল মশার মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের সংস্পর্শে আসা কোন মানুষ আর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে না।
ম্যালেরিয়া শূণ্য ভবিষ্যত্?
যদিও আর্টেমিসিনিনের মতো ওষুধ ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশ কমাতে সাহায্য করেছে কিন্তু ওষুধ-প্রতিরোধী নতুন ধরনের জীবাণু ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর হার কমানোর অগ্রগতির জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা শূন্যতে নামিয়ে আনতে পারে বলে মন্তব্য করে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন বিজ্ঞানী নোরা বেসানস্কি বলেন, “মশারা নিজস্ব পদ্ধতিতে এমন জায়গায় পৌঁছায় যেখানে আমাদের পৌঁছানোর সামর্থ্য নেই কিংবা পৌঁছাতে পারি না।
যদিও বিজ্ঞানীরা ১৯৭০ এর দশক থেকে মশার জিন পরিবর্তন করতে পারছে, কিন্তু সিআরআইএসপিআর পদ্ধতিটি আগের যে কোন কৌশলের তুলনায় অনেক বেশি নিখুঁত ও কম ব্যয়বহুল। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স এই আবিষ্কারকে “বছরের যুগান্তকারী অগ্রগতি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।
সিআরআইএসপিআর ম্যালেরিয়া নির্মূলের বাইরে আরো সুবিধা দিতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একদিন হয়তো বিজ্ঞানীরা সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিকেল সেল এনিমিয়া ও মাসকুলার ডিসট্রোফির মতো জিনগত রোগগুলো জয় করতে পারবে। এমনকি এটা হয়তো কলাকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে।
বিজ্ঞানীরা সিআরএসপিআর জেনেটিক প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং এর নৈতিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এখনো তাদের গবেষণাগারে ও কনফারেন্সের মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। (মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিবর্তিত মশা বিষয়ে দায়িত্বশীল গবেষণার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছিল।)
পদ্ধতিটি আরো উন্নত করা ও পরিমার্জনের কাজ চলাকালীন এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় পর্যায়ে ম্যালেরিয়া-মোকাবেলা প্রচেষ্টাকে ২০০৫ সালে চালু হওয়া প্রেসিডেন্টের ম্যালেরিয়া উদ্যোগ এর মাধ্যমে অব্যাহত রেখেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কীটনাশক ছিটানো এবং ওষুধ ও ওষুধযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয় । ম্যালেরিয়া-বিরোধী অভিযানের লক্ষ্য হলো ২০৪০-২০৫০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা।
এই লেখার প্রথম সংস্করণটি ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছিল।