যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন? সব মিলিয়ে ৫০টি অঙ্গরাজ্য আছে এখানে। নিউ ইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকারীদের শীর্ষ গন্তব্যগুলোর একটি। আপনি যদি শহুরে রোমাঞ্চ, নির্জন বুনো এলাকা অথবা মফস্বল শহরের অদ্ভুত মজা আস্বাদন করতে চান, তা পাবেন এখানেই।

ফ্যাশন, শিল্পকলা, ফিন্যান্স এবং খাবারদাবারের বৈশ্বিক রাজধানী নিউ ইয়র্ক সিটিতে নানা কিছু ঘটে চলেছে। আপনার যদি সর্বাধুনিক ডিজাইন, দামি খাবার, শৈল্পিক উদ্ভাবন অথবা যে কোনো ক্ষেত্রের সৃজণশীল বিষয়ে আগ্রহ থাকে, এটাই আপনার সঠিক গন্তব্য।

আপনার যদি শান্ত স্থিতধি জায়গা ভালো লাগে, চলে যান নিউ ইয়র্কের অ্যাডুর‌নড্যাকস এবং ক্যাটস্কিলস এলাকায়। সেই সঙ্গে নায়াগ্রা ফলসে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন, এমন এক নয়নাভিরাম জায়গা, আপনি কখনও ভুলবেন না।

এর বাইরে ঐতিহাসিক ঘরবাড়ি ঘুরে দেখতে পারেন এবং অনুসন্ধান করতে পারেন ভিন্নধারার বিষয়-আশয়, যেমন নিউ ইয়র্কে কমেডিয়ান লুসিয়েল বলের জন্মস্থান জেমসটাউনে লুসি-ডেসি সেন্টার ফর কমেডি। এই সেন্টারে আছে ১৯৫০-এর দশকে বলের বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘আই লাভ লুসি’-এ ব্যবহার করা সেটের পুনর্নিমাণ এবং ‘আই লাভ লুসি’র বিপুল স্মৃতিচিহ্নের সংগ্রহ। আপনি এমনকি একজন লুসি-সদৃশ ব্যক্তির সঙ্গে ছবিও তুলতে পারেন।

নিউ ইয়র্ক সম্পর্কে আরো পড়ুন এবং বাকি ৪৯টি অঙ্গরাজ্য সম্পর্কে খোঁজ নিন। ভ্রমণের জন্যে আপনার ভিসা দরকার হলে, সেটা কীভাবে পাবেন, এখানে জানতে পারবেন

শহর চিনুন

নিউ ইয়র্ক সিটির আকর্ষণ এতো অসংখ্য যে, বলে শেষ করা যাবে না। তবে এই মহানগরের অভিজ্ঞতা যদি আপনি পেতে চান, আপনার ইচ্ছা-তালিকায় বেশ কিছু জিনিস থাকতে হবে। টাইম স্কয়ারের উজ্জ্বল আলো দেখুন, ন্যাশনাল সেপ্টেম্বর ইলাভেন মেমোরিয়াল ঘুরে যান, যেটা আমেরিকার সংকট কাটিয়ে জেগে ওঠার শক্তির স্মারক। ব্রডওয়েতে একটি কোনো সাড়া ফেলা নাটক দেখুন অথবা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মতো সুবিখ্যাত কোনো অট্টালিকার ছাদের পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে শহরের নজরকাড়া দৃশ্য দেখুন।

 টাইম স্কয়ারের অট্টালিকা এবং ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড ৯০ (থিংকস্টক)
টাইমস স্কয়ারে অত্যুজ্জ্বল আলো আর অতিকায় বিলবোর্ডের ভিড় নিউ ইয়র্ক শহরের প্রাণস্পন্দনের স্বাক্ষর। (থিংকস্টক)

বিশ্বের সেরা জাদুঘরগুলোর কয়েকটি নিউ ইয়র্কে, যেগুলো সকল বয়স ও অভিরুচির লোকের মধ্যে আগ্রহ জাগায়। মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অব আর্টে আছে প্রাচীন মিশরীয় এবং গ্রিক আমল থেকে শুরু করে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া পপ আর্টের নিদর্শন। ফ্র্যাংক লয়েড রাইটের নকশায় বানানো এক অমূল্য স্থাপত্যকর্ম গাগেনহেইম মিউজিয়াম ইমপ্রেশনিস্ট, পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট, প্রাক আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলার ভান্ডার। আরও ঘুরে দেখুন ইউরোপের প্রাচীন মাস্টার শিল্পীদের শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট (যাকে সংক্ষেপে বলা হয় মোমা) এবং ফ্রিক কালেকশন। সেই সঙ্গে আমেরিকান ইউজিয়াম অব নেচারাল হিস্ট্রি ঘুরে দেখতেও ভুলবেন না, যেখানে আপনি ডায়নোসর, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং আরো অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন।

সেন্ট্রাল পার্কের ভেতরে হেঁটে বেড়ান, ফিফথ এবং মেডিসন এভিনিউতে তুমুল শপিং উপভোগ করুন এবং সব ধরনের নৃগোষ্ঠীর রান্না মেলে ধরা বিখ্যাত সব রেস্তোরাঁয় খাবার চেখে দেখুন।

ম্যানহ্যাটানের বাইরে যেতে চান? নিউ ইয়র্ক শহরের অপর চারটি মহল্লাও সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান। শহরের মধ্যে এক মরুদ্যান ব্রুকলিন বোটানিক গার্ডেন ঘুরে দেখুন এবং চলে যান কুইনসে জ্যামাইকা বে ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজে, যেখানে আছে ৩০০ প্রজাতির পাখি। নামকরা ব্রংকস জু ঘুরুন অথবা স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ফেরিতে উঠে পড়ে (যা বিনামূল্যের) সাউথ বিচে চলে যান, যেখানে আপনি সি-ফুড খেতে পারবেন, সৈকতের বালুকাবেলায় বসে সময় কাটাতে পারবেন এবং সার্ফ করতে পারবেন।

মিষ্টিমুখ

আপনি যদি এর আগে নিউ ইয়র্ক ধাঁচের চিজকেক খেয়ে না থাকেন, তাহলে বিশেষ কিছু অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে। নিউ ইয়র্কের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ ও বেকারিতে এই উপাদেয় ডেজার্ট পাওয়া যাওয়া ক্লাসিক ভ্যানিলা বিন থেকে শুরু করে রেড ভেলভেট, কি লাইম, চকলেট ট্রাফল, স্ট্রবেরি সোয়ার্ল অথবা অন্য যে কোনো বিচিত্র স্বাদে।

প্লেটে ব্লেকবেরি দেওয়া চিজকেকের টুকরা। (স্যাবোট্র্যাক্স/ক্রিয়েটিভ কমনস)
উপরে ব্ল্যাকবেরি দেওয়া নিউ ইয়র্ক ধাঁচের চিজকেক। (স্যাবোট্র্যাক্স/ক্রিয়েটিভ কমনস)

নয়নাভিরাম দৃশ্য         

শহুরে জঙ্গল থেকে নিষ্কৃতি চান? চলে যান উত্তর নিউ ইয়র্কে অ্যাডুর‌নড্যাক পার্কের মধ্যে অ্যাডুরনড্যাক মাউনটেইনে। সেখানে আপনি পাবেন অগণিত হ্রদ আর নদী এবং অজস্র ক্যাম্প করার জায়গা, হোটেল এবং লজ।

আরেকটি দারুণ অবকাশ স্থান হলো ক্যাটস্কিল মাউন্টেইনস (ক্যাটস্কিল নামেই বেশি ডাকা হয়)। ক্যাম্পার, হাইকার, বাইসাইকেল চালক ও স্কিয়ারদের কাছে খুবই জনপ্রিয় নিউ ইয়র্কের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এই ক্যাটস্কিলস। এলাকাটা শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ এবং লেখকদের জন্য স্বর্গ। কাজেই এখানে আপনি পাবেন সামার কনসার্ট, আর্ট সেন্টার এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক বিষয়।

এরপর আছে নায়াগ্রা ফলস। এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্ত বরাবর নিউ ইয়র্ক থেকে অন্টারিও পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা তিনটি জলপ্রপাতের সম্মিলিত নাম। নায়াগ্রা নদীতে অবস্থিত এই সম্মিলিত জলপ্রপাতসমুহের সৌন্দর্য ভুবনবিখ্যাত। ৫০ মিটারের বেশি উলম্ব জণপতন ঘটে এখানে।

ঐতিহাসিক ঘরবাড়ি

হাডসন রিভারের উল্টোদিকে অবস্থিত হাইড পার্ক আপনার সামনে মেলে ধরবে আমেরিকার দুই প্রখ্যাত পরিবারের নিজস্ব জগতের কিছু খণ্ডচিত্র: ভ্যানডারবিল্ট পরিবার ও রুজভেল্ট পরিবার।

ভ্যানডারবিল্ট ম্যানশন ন্যাশনাল হিস্টোরিক সাইটে আছে সাজানো বাগান, প্রাকৃতিক অরণ্য এবং ১৯ ও ২০ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের ধনাঢ্য শিল্পপতিদের আলিশান বাসভবনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ফ্রাংকলিন ডেলানো রুজভেল্টের স্টেট স্প্রিংউডে আছে ফ্রাংকলিন ডেলানো রুজভেল্ট প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি অ্যান্ড মিউজিয়াম। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ভ্যাল-কিল কটেজ, যেটি ফ্রাংকলিনের স্ত্রী এলানোর রুজভেল্টের অবকাশযাপন কেন্দ্র। দুটি স্থানই ভ্রমণ করুন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট এবং সেই ফার্স্ট লেডি সম্পর্কে জানতে, যিনি নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অক্লান্ত অগ্রদূত হয়ে উঠেছিলেন।

সিঁড়ি ও বারান্দাসহ একটি সুদৃশ্য ভবনের অংশ (ক্রাঞ্চ/ক্রিয়েটিভ কমনস)
নিউ ইয়র্কের হাইড পার্কে স্প্রিংউড এস্টেট ছিল ফ্রাংকলিন ডেলানো রুজভেল্টের জন্মস্থান ও বাসা। (ক্রাঞ্চ/ক্রিয়েটিভ কমনস)