যুক্তরাষ্ট্রে বহু পরিচয়, ভাষা ও ধর্মের মিলন হয়েছে। এই বৈচিত্র্য আমেরিকান পরিচয়ের মৌলিক অংশ, এবং বহু মানুষ তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করার জন্য নিজেদের জীবন নিয়োজিত করেছেন।
কিরিনা গিয়ারি একজন আমেরিকান আদিবাসী। তিনি কখনো ভাবেননি, পূর্বপুরুষের ভাষা মাটসান সংরক্ষণ করাই তাঁর সারা জীবনের কাজ হবে; কিন্তু বলেছেন, এটা করতে গিয়েই তাঁর ঘরে ফেরার মতো অনুভূতি হচ্ছে।
টেমিন নেশনের সভাপতি গিয়ারি, আমেরিকার এমন অনেক আদিবাসী নারীর একজন, যাঁরা তাঁদের নিজ নিজ গোত্রের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে লেখাপড়া করছেন, শিক্ষা দিচ্ছেন এবং প্রচার চালাচ্ছেন।
আদিবাসী আমেরিকান হিসেবে বড় হওয়া এবং এর পাশাপাশি নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চর্চা করলেও গিয়ারি বলছেন, “আমাদের ভাষাটাই কেবল ছিল না, অথচ ভাষার সাথেই আমাদের আত্মপরিচিতির যোগসূত্র সবচেয়ে গভীর ।”

১৯৯৬ সালে গিয়ারি এবং তাঁর বোন বার্কলি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি কর্মশালায় অংশ নেন, যার আয়োজন করেছিল অ্যাডভোকেটস ফর ইনডিজেনাস ক্যালিফোর্নিয়া ল্যাংগুয়েজ সারভাইভাল।
সেই সম্মেলনে গবেষণার সময় তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের প্র-প্র-প্র-পিতামহী ১৯২০ সালে মারা যাওয়ার আগে বিশ শতকের শুরুর দিকের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মাটসান ভাষা সংরক্ষণের ব্যাপারে কাজ করেছিলেন।
গিয়ারি বলছেন, তিনি যে তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার কাজ করে যাচ্ছেন, সেটা যে সঠিক, এই ঘটনা তারই ইঙ্গিত। তিনি বলছেন, “আমরা কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমাদের কাছে তাঁর সেই কাজটা খুবই মূল্যবান।”
এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার একজন শিক্ষাবিদের সঙ্গে মাটসান ভাষায় কথা বলা এবং নথিবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন। তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে, প্রকাশ করেছেন মাটসান-ইংলিশ ডিকশনারি। যেটা এ ধরনের প্রথম কোনো প্রকাশনা। এ ছাড়া মাটসান ভাষায় শিশুদের জন্য কয়েকটি বই প্রকাশ করেছেন গিয়ারি।

গিয়ারি বহু বছর ধরে মাটসান উত্তরসূরিদের মাটসান ভাষা শেখাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, ৬০ জন ছাত্র নাম লেখালেও ১৫ জন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী, নিয়মিত আসছেন এবং তাঁরা এই ভাষা শেখার ব্যাপারে নিবেদিতপ্রাণ। তিনি বলছেন, “আমি যখন মাটসান শিখছিলাম, আমি এটা নিশ্চিত করেছি, যেন আমার এই ভাষাজ্ঞান সবার সাথে বলে সবাইকে শেখাতে পারি ।“
হারিয়ে যাওয়া ভাষা
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে (পিডিএফ, ১.৪ মেগাবাইট) বলা হচ্ছে, একুশ শতকের শেষ নাগাদ ৯০% আদিবাসী ভাষা হারিয়ে যাবে এবং ১৯০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০০ ভাষা হারিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও অসংখ্য আদিবাসীর ভাষা প্রচলিত আছে এবং এখানে সব জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়।

ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অন এইজিং এর ভাষ্যমতে, কোনো ভাষা যদি ১০,০০০ জনের কম মানুষ ব্যবহার করেন, তখন ধরে নিতে হবে, সেই ভাষার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
গিয়ারি নানা গবেষণার উদাহরণ দিয়ে বলছেন, মাটসানের মতো আদিবাসী ভাষার চর্চা, সংস্কৃতি, যৌথ অভিজ্ঞতা আর ঐতিহ্যকে উদ্যাপনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্কের বন্ধন তৈরি হয়।
তিনি বলেন, “এটা কেবল একটা ভাষায় কথা বলা নয়; বরং এটা আমাদের সত্ত্বার এত গভীরে প্রোথিত যে, যখন একটা ভাষার প্রসার হয়, তখন সেই ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর উন্নতি হয়, অনেক ভালো কিছুর সূচনা হয়।“
ট্যাগ: সংস্কৃতি সংরক্ষণ, নারী নেতৃত্ব, আমেরিকান আদিবাসী, সামাজিক আন্দোলন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস