“যুদ্ধকে না”: ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছেন রাশিয়ার বিশিষ্টজনেরা

রাস্তায় বিক্ষোভের মধ্যে প্রতিবাদকারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (© আন্তন ভাগানোভ/রয়টার্স)
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন হাজারো মানুষ, সমালোচনায় সরব হচ্ছেন দেশটির বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিত্বও। (© অ্যান্তন ভাগানোভ/রয়টার্স)

রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ৮০০০-এরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ। রাশিয়াজুড়ে কয়েক ডজন শহরে সাহসী প্রতিবাদকারীরা যখন শান্তির ডাক দিচ্ছেন, তখন দেশটির কিছু বিশিষ্ট নাগরিক রাশিয়ার ভেতর ও বাইরে থেকে এই ডাকে নিজের কণ্ঠ যুক্ত করছেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় প্রকাশিত, পুতিনকে লেখা চিঠিতে রাশিয়ান-ব্রিটিশ মিডিয়া মুগল, ইভগেনি লেবেদেভ বলেছেন, “রাশিয়ার একজন নাগরিক হিসেবে, আমি আপনার কাছে আর্জি জানাচ্ছি যেন রাশিয়ানরা তাদের ইউক্রেনিয়ান ভাই ও বোনদের হত্যা থেকে বিরত থাকে।” পত্রিকাটি লেবেদেভের মালিকানাধীন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারির ইউক্রেন আক্রমণের জন্য গোটা বিশ্ব একযোগে পুতিনের নিন্দা জানিয়েছে। ২ মার্চ, জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের একটি জরুরি অধিবেশনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে ১৪১-৫ ভোটের ব্যবধানে। ৩০টিরও বেশি দেশ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।

২৫ ফেব্রুয়ারি, দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল জেতার পর, রাশিয়ান টেনিস তারকা আন্দ্রে রুবলেভ একটি টিভি ক্যামেরার লেন্সে লিখেছেন: “দয়া করে যুদ্ধ নয়।”

যুদ্ধের বিরোধিতা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা পোস্ট করেছেন আরও অনেক রাশিয়ান ক্রীড়াবিদ, যাদের মধ্যে আছেন টেনিস চ্যাম্পিয়ন দানিল মেদভেদেভ এবং ডায়নামো মস্কোর ফুটবল তারকা ফিওদর স্মোলোভ।

সঙ্গীতশিল্পী, অন্যান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন তারকারাও কথা বলছেন, এবং কেউ কেউ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যক্তিগত মূল্য দিয়েও। ২ মার্চ, বিশ্বব্যাংকে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক বোরিস এলভিন পদত্যাগ করেছেন প্রতিবাদ জানিয়ে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুসারে, এলভিন একটি ইমেইলে লিখেছেন, “চলমান ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে আমি কোনোভাবেই নিজেকে আমার সরকারের সঙ্গে যুক্ত রাখতে পারছি না।”

বিভিন্ন লোগো সম্বলিত কমলা রঙের ব্যাকড্রপের সামনে ইভান আরগান্ট। (© মিখাইল জাপারিডজে/গেটি ইমেজেস)
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে বিশিষ্ট নাগরিকেরা যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছেন— তাদের মধ্যে অন্যতম অভিনেতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব ইভান আরগান্ট। ছবিটি ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখের। (© মিখাইল জাপারিডজে/গেটি ইমেজেস)

সংবাদপত্রের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ইনস্টাগ্রামে “যুদ্ধকে না” বার্তা লিখে পোস্ট করার পর থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে কৌতুকাভিনেতা আইভান উরগান্তের লেট নাইট টিভি শো আর প্রচার করা হয়নি।

রাশিয়ার আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়ে মস্কো ও সেইন্ট পিটার্সবার্গে ছয়টি সোল্ড-আউট শো বাতিল করেছেন “অক্সিমিরন” নামে পরিচিত রাশিয়ান র‌্যাপার মিরন ফিওদোরোভ।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুবাদ অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন “আমি জানি যে, রাশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে, এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে, যত বেশি মানুষ তাদের সত্যিকারের মনোভাব প্রকাশ করবে, তত দ্রুত আমরা এই ভয়াবহতা বন্ধ করতে পারব। ইউক্রেনে যেসময় রাশিয়ান মিসাইল পড়ছে, সেসময় আমি আপনাদের বিনোদন দিতে পারব না।”

লাল ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে, মুখে মাইক্রোফোন ধরে আছেন অক্সিমিরন (© পাভেল গোলোভকিন/এপি ইমেজেস)
ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রতিবাদে শো বাতিল করেছেন রাশিয়ান র্যাপার অক্সিমিরন, যাঁর আসল নাম মিরন ফিওদোরোভ (ছবিটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের)। (© পাভেল গোলোভকিন/এপি ইমেজেস)