সীমানাবিহীন পাঠক

কমপিউটারের স্ক্রীণের দিকে তাকিয়ে এক নারী হাসছেন পাশে রাখা খোলা বই (© শাটারস্টক)
কোভিড-১৯ মহামারি বুক ক্লাব সদস্যদের অনলাইনে আলোচনায় উত্‌সাহিত করেছে। (© শাটারস্টক)

বুক ক্লাব (বই পড়ুয়াদের ক্লাব) সাহচর্য পাওয়া, পড়তে উত্‌সাহিত হওয়া এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার একটি স্থান।

করোনাভাইরাস মহামারি বইপ্রেমীদের ইন্টারনেটের অনলাইনে জুমের মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ  করার মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত করেছে; তারা এর মাধ্যমে বইপ্রেমীদের নতুন নতুন ক্লাবে যুক্ত হওয়ার এমনকি নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য দেশগুলোর বুক ক্লাবের সাথেও নিজেদেরকে যুক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে।

বুক ক্লাবের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ক্লাবের সদস্যরা কোন একটি নির্দিষ্ট মাসে সবাই একই বই পড়তে সম্মত হন, তারপর মাস শেষে তারা কোথাও একত্রিত হয়ে হালকা চা-নাস্তা খেতে খেতে ওই বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। এই ধরনের সমাবেশ সাধারণত কোন ক্যাফে কিংবা কারো বাসাতে আয়োজন করা হয়। আবার উম্মুক্ত স্থান যেমন গণ গ্রন্থাগারগুলোতেও এই ধরনের সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ( পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য মতে, প্রায় ১১ শতাংশ আমেরিকান কোন না কোন বুক ক্লাবের সদস্য।)

বুক ক্লাবগুলোর জন্য রিসোর্স ও পাঠকদের জন্য গাইড হিসেবে কাজ করা বুকব্রাউজ সাইটের প্রকাশক ডেভিনা মর্গান-উইটস বলেন, বুক ক্লাব সদস্যদের অনলাইনে পাঠচক্রের কারণে অনেক দূরের জায়গা থেকে নবাগত পাঠকরা যুক্ত হওয়ার ও পুরনো সদস্যরা কোন এলাকা ছেড়ে গেলেও নিজেকে যুক্ত রাখতে পারছেন।

“আপনাকে ধরুন এখন আর ১০ মাইলের মধ্যে থাকার প্রয়োজন নেই,” মর্গান-উইটস বলেন। ভিন দেশের বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গির মানুষকে একত্রিত করতে পারা এখন বাড়তি পাওয়া — বোনাস।

নীরবে যুক্ত হওয়া

সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রার এক বুক ক্লাব শুরু করেছিলেন লরা গ্লুহানিচ এবং তার বন্ধু গিনিভের দে লা মারে। তারা একটি বারে বসে একসাথে বই পড়া শুরু করেন। তারা এটাকে নাম দিয়েছেন সাইলেন্ট বুক ক্লাব, যেখানে এর সদস্যরা বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চস্বরে আলাপ করে না। এই ধরনের ক্লাবের সদস্যরা এক জায়গায় বসে নীরবে বই পড়েন — এমনকি তারা একই বই নাও পড়তে পারেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ, ভারতের মিরাট ও ওয়াইমিংয়ের লারামিসহ বিশ্বে সাইলেন্ট বুক ক্লাবের ২৫০টি শাখা রয়েছে।

এই ক্লাবের সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে নিজেদের মধ্যে দেখা করেন এবং সে সময়ে তারা কোন বই পড়ছেন তা দেখানোর জন্য কয়েক মিনিট ব্যয় করেন। এই সময়টায় তারা ৪০ মিনিট (জুম কিংবা অনুরূপ কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে) নীরবে বই পড়েন এবং সবশেষে তারা তাদের পড়া বই থেকে প্রিয় একটি অংশ অন্যকে পড়ে শোনান।

“লাভ হলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা — কোন বই কিংবা বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ হওয়া ছাড়াই নিজের মতো করে বইপ্রেমী সাথীদের সাথে সংযোগ স্থাপন,” গ্লুহানিচ বলেন।

প্রচলিত ক্লাবগুলোর মতোই এই অনলাইন ক্লাবগুলোও পাঠকদের বই সম্পর্কে ধারণা পেতে ও নতুন নতুন বই খুঁজে পেতে সাহায্য করছে।