
এ বছর ১৮ জানুয়ারি গৃহযুদ্ধের বীরদের প্রতি সম্মানার্থে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত ছুটির দিনে আমেরিকানরা মার্টিন লুথার কিং’র প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে।
তবে ওহাইওর টলেডোস্থ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র একাডেমি ফর বয়েজ’র ছাত্ররা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকার প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করে এবং স্কুলে কিং’র জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত শপথবাক্য আবৃত্তি করে।
“মেধা ও চরিত্র… শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য।” -মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
শপথ বাক্যের মধ্যে রয়েছে সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, নিজের প্রতি আস্থা, নিজ সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নেয়া, দায়িত্ব গ্রহণ করা, শেখার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র মানুষ হওয়ার অঙ্গীকার।
প্রতিটি কক্ষে ও ভবনের প্রবেশপথে কিং’র প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে। এর শ্রেণীকক্ষগুলোর সড়ক নির্দেশক ফলকগুলোও আফ্রো-আমেরিকান বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে শোভিত। এর একটি সড়কের নামফলকে লেখা আছে “মার্টিন লুথার কিং স্ট্রিট”। এর পাঠ্যসূচীতেও কিং সম্পর্কে নিয়মিতভাবে পড়ানো হয়।
উদাহরণস্বরূপ, তাঁর ওয়াশিংটন পদযাত্রার ফলে ১৯৬৪ সালে নাগরিক অধিকার আইন প্রণয়নের পথ খুলে গিয়েছে এবং বৈষম্য নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইন প্রণয়নেও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলো তাঁর আন্দোলন যার ফলে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার অস্বীকার করে আসা পুরনো চর্চাগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিলো।

এ বিষয়ে পাঠদানের সময়সূচী নির্ধারণ করা হয় কিং’র জন্মদিন উপলক্ষে ঘোষিত জানুয়ারির ছুটি বা ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ হিসাবে গৃহীত ফেব্রুয়ারি মাসের বাইরেও। অধ্যক্ষ উইলি ওয়ার্ড ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটা শুধু একটা মাসের ব্যাপার না, এটা একটা মনোভাব।”
“এটা একটা স্বীকৃতি, ড. কিং’র রেখে যাওয়া কীর্তি এবং তিনি যা কিছু করে গেছেন, যত কষ্টভোগ করেছেন… আজ আমরা যত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি, সেগুলো অর্জনে তিনি যত ত্যাগস্বীকার করেছেন তার প্রতি এটা একটা শ্রদ্ধা।”
একটা নামে কী আছে?
ন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ স্ট্যাটিসটিক্স-এর তথ্য মতে, সারা আমেরিকা জুড়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা কমপক্ষে ১১০টি সরকারী স্কুলের নামকরণ করেছেন কিং’র নামানুসারে। তাঁর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জর্জিয়া, ম্যাসাচুসেটস এবং টেনেসি।
এ ধরনের স্কুলগুলো তাদের পুরো পাঠ্যসূচীতে কিং’র রেখে যাওয়া কীর্তি বিষয়ে সমৃদ্ধ পাঠদান করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, টেনেসির মেম্ফিসে অবস্থিত মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র কলেজ প্রিপারেটরি হাই স্কুল থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক ন্যায়বিচারে দক্ষ হবে এবং সমাজ সেবায় সম্পৃক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়।
এ বছর ১৮ জানুয়ারি মার্টিন লুথার কিং দিবসে (MLK Day) স্কুলটি দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে MLK সোশ্যাল জাস্টিস ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রম চালু করবে। প্রথমটি কোট বিতরণ কার্যক্রম যার আওতায় শিক্ষার্থীরা মেম্ফিস’র কর্মকর্তাদের সাথে দল বেঁধে ১,০০০ কোট ও শীতের অন্যান্য জরুরী উপকরণ বিতরণ করবে। দ্বিতীয়টি হলো অভাবীদের মধ্যে প্রসাধন সামগ্রী বিতরণ এবং গরম ও ঝাল স্যুপ পরিবেশনের জন্য প্রচারণা চালানো।
এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা মেম্ফিস’র সাথে কিং’র সম্পর্ক বিষয়ে শেখার জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে একটি কর্মশালায়ও অংশগ্রহণ করবে। (পয়ঃনিষ্কাশন কর্মীদের নিরাপদ পরিবেশ ও ভালো মজুরি লাভের দাবিতে সমর্থন দিতে কিং মেম্ফিসে ছিলেন। সেখানেই ১৯৬৮ সালের ৫ এপ্রিল কিং এক শেতাঙ্গ বর্ণবাদীর হাতে নিহত হন।)
প্রিপারেটরি স্কুলের শতকরা ৯৭ ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। বর্ণবৈষম্য এখনও রয়েছে উল্লেখপূর্বক এর প্রশাসকেরা বলেন, শিক্ষার্থীদের এটা শেখা গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের কণ্ঠ কতটা শক্তিশালী এবং কীভাবে তাদেরকে কৌশলগতভাবে সংগঠিত করা যায়।

অধ্যক্ষ ডেলনিটা মিকি প্রত্যাশা করেন, তাঁর স্কুলের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদেরকে “কীভাবে ভাবতে হয়, কীভাবে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং নিজেদের ভেতরে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে হয়, এবং কীভাবে সমাজের জন্য কাজ করতে হয়” সেসব বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।
কিং’র জন্মস্থান আটলান্টা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে জর্জিয়ার ম্যাকনস্থ ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এলিমেন্টারি স্কুলে স্থাপিত কিং’র মুখচ্ছবিযুক্ত বিশাল এক ম্যুরালে তাঁর বাণী লেখা আছে – “শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য হলো মেধা ও চরিত্র।” স্কুলে প্রবেশকালে এই ম্যুরাল সকলকে স্বাগত জানায়।
অধ্যক্ষ টোয়ানিয়া উইলসন বলেন, এখানকার শিক্ষার্থীরা নিজেদের চরিত্র গঠনে তাঁর চরিত্রের প্রতি মনোযোগী হয় এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলন বিষয়ে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন সেগুলো শেখে।
প্রথা হিসাবে পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কিং’র সমাধিস্থলে এবং তিনি যেখানে যাজক ছিলেন সেই এবেনিজার ব্যাপটিস্ট চার্চ দেখতে যায়। (এ বছর এই ভ্রমণগুলো ভার্চুয়াল মাধ্যমে হতে পারে।)
উইলসন বলেন, কিং’র রেখে যাওয়া কীর্তির প্রতি অবিচ্ছিন্ন মনোযোগের কারণ হলো “এই স্কুলের নামটি মহত্বের সমার্থক (এবং) আমরা মহত্বের লক্ষ্যেই পরিচালিত।”