সংবেদনশীল প্রযুক্তি অন্যকে দেয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া

শিপিং কন্টেইনার একটি অন্যটির উপর স্তুপ করে রাখা হয়েছে (© শাটারস্টক ডট কম)
আন্তর্জাতিক সহযোগীরা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে সহায়তা করার মাধ্যমে অস্ত্রের বিস্তার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও দুর্জনদের হাতে সম্ভাব্য বিপজ্জনক প্রযুক্তি পৌঁছানো রোধ করে। (© শাটারস্টক ডট কম)

উন্নতি প্রযুক্তি বড় ধরনের সুবিধা দেয়। মাইক্রোচিপ যন্ত্রপাতি চালাতে এবং মহাকাশ অনুসন্ধানে সহায়তা করে এবং পারমাণবিক বিদ্যুত্‌ কেন্দ্রগুলো কোটি কোটি মানুষের কাছে বিদ্যুত্‌ পৌঁছে দেয়।

কিন্তু উন্নত ও সংবেদনশীল প্রযুক্তি যদি ভুল হাতে পড়ে তাহলে সেগুলো নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কমপিউটার চিপ ক্ষেপনাস্ত্র পরিচালনা করে। কর্তৃত্ববাদী শাসকরা পারমাণবিক উপাদানকে অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করতে পারে।

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও অনেক আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা বহুপাক্ষিক ফোরামে অংশগ্রহণ করেছিল যা তাদেরকে একদিকে উদ্ভাবনের সুবিধাগুলো ভাগ করে নিতে সহায়তা করে এবং অন্যদিকে সম্ভাব্য বিপজ্জনক পণ্য ও প্রযুক্তিকে অস্ত্রের বিস্তারকারী, সন্ত্রাসী ও অন্যান্য মন্দ ব্যক্তিদের থেকে দূর রাখতে সহায়তা করে।

এই বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব দায়িত্বের সাথে প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা ও অনুশীলনগুলো নির্ধারণ করতে সহায়তা করে। তারা বেসামরিক ও সামরিক উভয় উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য পণ্য ও দ্বৈত-ব্যবহার উপযোগী প্রযুক্তি শনাক্ত করে এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক প্রযুক্তির ভুল হাতে পড়া রোধ করতে দেশগুলোকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে আস্থা তৈরির মাধ্যমে বাণিজ্যে সহায়তা করে। রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই আস্থা তৈরি হয় যে, তারা অস্ত্রের বিস্তার ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ক্ষতি করছে না।

পৃথিবীর উপর দিয়ে রকেট মহাকাশে উড়ে যাচ্ছে (© শাটারস্টক ডট কম)
দ্বৈত ব্যবহার ও যুদ্ধাস্ত্র প্রযুক্তি যেমন রকেট ইঞ্জিন, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত কারণ এটি মানুষকে মহাকাশে পাঠাতে পারে আবার ক্ষেপনাস্ত্র উত্‌ক্ষেপণ করতে পারে। (© শাটারস্টক ডট কম)

পণ্য ও প্রযুক্তির স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণের জন্য চারটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হলো:

  • অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ: ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ ৪২টি দেশ নিয়ে গঠিত যারা নীতিমালার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করে যে রপ্তানির মাধ্যমে রাসায়নিক কিংবা জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচিকে সহায়তা করা হচ্ছে না।
  • মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রিজিম (ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা): মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রিজিম (এমটিসিআর) ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা ৩৫। সদস্যরা ক্ষেপনাস্ত্র উন্নয়ন, উত্‌পাদন ও পরিচালনা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, উপকরণ, সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করে।
  • নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ (পারমাণবিক সরবরাহকারী গ্রুপ): ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪৮। এই গ্রুপ পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ করার জন্য উপকরণ, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি রপ্তানির নির্দেশিকা তৈরি করে।
  • প্রচলিত অস্ত্র এবং দ্বৈত ব্যবহারয়োগ্য পণ্য ও প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের উপর ওয়াসেনার ব্যবস্থা: ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ৪২ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ওয়াসেনার ব্যবস্থা অস্ত্র, নজরদারি ও প্রচলিত অস্ত্র-সম্পর্কিত দ্বৈত ব্যবহারের পণ্য ও প্রযুক্তি রপ্তানির জন্য নির্দেশিকা তৈরি করে।

যদিও এই আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বগুলো (বিপজ্জনক পণ্য ও প্রযুক্তি) বিস্তারের ঝুঁকি সীমিত করে বিশ্বকে নিরাপদ করতে চায়, কিন্তু সকল দেশ এই অংশীদারিত্বের সাথে যুক্ত সদস্যদের মতো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকিকে ততোটা গুরুত্বের সাথে নেয় না।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (পিআরসি) সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য পণ্য ও প্রযুক্তি অর্জনের জন্য তার বৈশ্বিক সম্পর্কগুলোকে কাজে লাগায়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয় থেকে গত এপ্রিল মাসে সতর্ক করা হয়েছিল যে, পিআরসি তাদের প্রযুক্তিগত সামর্থ্য বাড়াতে বৈধ অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে গুপ্তচরবৃত্তি ও চুরির আশ্রয় পর্যন্ত নিচ্ছে।

এছাড়াও পিআরসি তাদের জাতীয় গোয়েন্দা আইন ও মিলিটারি-সিভিল ফিউশন (এমসিএফ) নামে পরিচিত একটি কৌশল ব্যবহার করে চীনা কোম্পানি ও বিশেষজ্ঞদের তাদের সামরিক বাহিনীর সাথে প্রযুক্তি তথ্য বিনিময়ে বাধ্য করছে।

এমসিএফ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের পুরো ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করছে যাতে করে উন্নত ও সংবেদনশীল প্রযুক্তিগুলো অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয়ের আধুনিকীকরণ এগিয়ে নিতে পারে কিন্তু সেখানে এই নিশ্চয়তা নেই যে এই ধরনের আধুনিকীকরণে ব্যবহৃত প্রযুক্তি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হবে।

আগস্ট ২০১৯ এ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ চীনের চারটি পারমাণবিক জ্বালানী শক্তি সংস্থাকে তাদের এনটিটি লিস্টে যুক্ত করেছে। কারণ চীনের এই সংস্থাগুলো চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জনের চেষ্টা করেছিল। এনটিটি লিস্ট-এ নাম উঠা মানে এই কোম্পানিগুলো আমেরিকা থেকে বিশেষ অনুমতি ছাড়া সফটওয়্যার, প্রযুক্তি কিংবা অন্য কোন পণ্য গ্রহণ করতে বা সংগ্রহ করতে পারবে না।

জাতিসংঘে ২ নভেম্বর দেয়া ভাষণে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বহুপাক্ষিক শাসন মেনে চলার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান; কারণ এই ব্যবস্থা অস্ত্রের বিস্তার সীমিত করে। তিনি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন।

“প্রতিটি দেশ এই প্রযুক্তিগুলোর সুবিধা নিতে চায় — একই সাথে তারা এই ধরনের প্রযুক্তি সন্ত্রাসী ও ভুল ব্যক্তির হাতে পড়ার উপায়গুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে এমন অবস্থা কমিয়ে আনতে চায়,” উল্লেখ করে থমাস গ্রীনফিল্ড বলেছেন, “এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”