ইশারা-ভাষা-বান্ধব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে

কোনও দোকানে গিয়ে কাউন্টারের পেছনে থাকা মানুষের সাথে কথা বলা বধির ও শ্রবণ-প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিরল অভিজ্ঞতা।

যুক্তরাষ্ট্রে বধির-বান্ধব এবং ইশারা-ভাষা-বান্ধব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, যারা আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (এএসএল)-কে যোগাযোগের প্রাথমিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করছেন। বধির ও শ্রবণ-প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং এক্ষেত্রে অর্থায়নের কারণেই এমনটা ঘটা সম্ভব হচ্ছে। সিয়াটেলের আইসক্রিমের চেইন শপ মলি মুনস তাদের কর্মীদের ইশারা ভাষা এএসএলে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মেরিল্যান্ডের বার স্ট্রিটকার ৮২ ব্রুয়িং কোম্পানি বধির ব্যক্তির মালিকানাধীন এবং প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্রেতাদের জন্য আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ইশারা ভাষা শেখার ব্যবস্থা রেখেছে।

দোকানে ইলেকট্রনিক প্যাডে লিখে ক্রেতা পানীয় অর্ডার করছেন (© যশুয়া ট্রুজিল্লো/স্টারবাকস)
ওয়াশিংটনে ইলেকট্রনিক প্যাডে লিখে খাবারের অর্ডার করার ব্যবস্থা প্রথম চালু করা কফি বিক্রির চেইনশপ স্টারবাকসে একজন ক্রেতা খাবারের অর্ডার দিচ্ছেন। (© যশুয়া ট্রুজিল্লো/স্টারবাকস)

ওয়াশিংটনের এইচ স্ট্রিট করিডোরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চালু হওয়া স্টারবাকস কফি শপটি স্টারবাকস চেইনশপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এএসএল-কেন্দ্রিক দোকান।

সাইনিং স্টারবাকস নামে পরিচিত এই দোকানের বিক্রয়কর্মীরা আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (এএসএল) ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী গ্যালউডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে খাবারের অর্ডার নেয়। উল্লেখ যে, গ্যালউডেট বিশ্ববিদ্যালয় হলো বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মূলত বধির ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে। শ্রবণ-প্রতিবন্ধী ক্রেতারা ইলেকট্রনিক প্যাডে লিখে খাবার অর্ডার করেন। (বোনাস: খাবার যখন ক্রেতাকে দেয়া হয় তখন নামের বানানে কোন ভুল থাকে না।)

“আমরা ইতিহাস তৈরি করছি,” উল্লেখ করে স্টোরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব দি ডেফ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাওয়ার্ড রোজেনব্লাম বলেছেন, “অন্যান্য কর্পোরেশন এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সাইনিং স্টোর ও রেস্টুরেন্ট চালু করার ব্যাপারে অনুগ্রহ করে (সবাই) এগিয়ে আসুন।”

কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তখনই বধির-বান্ধব বলা যাবে যখন এটি বধির ও শ্রবণ-প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কাছে পণ্য ও সেবা বিক্রয় করবে, ক্রেতাদের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে ভিজুয়াল বা দৃষ্টিগ্রাহ্য তথ্য দেবে, কর্মীদের ইশারা ভাষা ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে এবং ব্যবসা পরিচালনা নীতিমালায় শ্রবণ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণকে উৎসাহিত করা হবে।

গ্যালাউডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদের অধ্যাপক টম বাল্ড্রিজ বলেছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বধির ও শ্রবণ-প্রতিবন্ধী কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হলে বিশেষ করে ব্যবস্থাপকীয় পদে তাদেরকে নিয়োগ করা হলে বধির ও শ্রবণ-প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী ব্যবসা ক্ষেত্রে আগাতে পারবে।

অধ্যাপক বাল্ড্রিজের নেতৃত্বে গ্যালাউডেটের শিক্ষার্থীরা এইচ স্ট্রিটের কাছাকাছি থাকা ওয়াশিংটনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীভাবে বধির-বান্ধব বিষয়গুলো চর্চা ও অন্তর্ভুক্ত করা যায় শিখিয়ে থাকে। এছাড়াও অধ্যাপক বাল্ড্রিজ শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করার বিষয়েও শেখান।

পৃষ্ঠপোষকরা বারটেন্ডারের সাথে যোগাযোগের জন্য ইশারা ভাষা ব্যবহার করছেন (স্টেট ডিপার্টমেন্ট/ডি.এ. পিটারসন)
মেরিল্যান্ডের স্ট্রিটকার ৮২ ব্রুয়িং কোম্পানিতে বারটেন্ডার জেন পেডারসন হোলি ফলস্টোন (মাঝে) এবং কেট ফেজারের (ডানদিকে) সাথে ইশারা ভাষায় যোগাযোগ করছেন।

মেরিল্যান্ডের বার স্ট্রিটকার ৮২ ২০১৬ সালে গ্যালউডেড ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ ইন্সটিটিউট এর বিজনেস-পিচ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিল। সেই জয়ের কথা স্মরণ করে স্ট্রিটকার ৮২-এর সহ-স্বত্বাধিকারী স্যাম কস্টনার বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেন “এটি আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছিল, আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছিল।”

তাঁর কথার সাথে অধ্যাপক বাল্ড্রিজ যোগ করে বলেন, “বধির (শ্রবণ-প্রতিবন্ধী)-দের ব্যবস্থাপনা পদে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হলে সেটা ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ও বাস্তব উদাহরণ হবে এবং তরুণ বয়সী বধির জনগোষ্ঠীর জন্য অনুকরণীয় রোল মডেল হবে।”