সামরিক অভ্যুত্থানের ২ বছর, আমরা বার্মার জনগণের পাশেই আছি

বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় হাত তুলে আছে (© সাকচাই ললিত/এপি)
২০২২ সালের ২৬ জুলাই ব্যাংককে বার্মার দূতাবাসের বাইরে মানুষ বিক্ষোভ করছে। (© সাকচাই ললিত/এপি)

যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা বার্মার সামরিক জান্তার নৃশংসতার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য কাজ করার পাশাপাশি তারা বার্মার গণতন্ত্রের সমর্থকদের সমর্থন করছে এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তাও দিচ্ছে।

বার্মার সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উত্‌খাত করার পর যুক্তরাষ্ট্র বার্মার সামরিক জান্তার সাথে সংশ্লিষ্ট ৭৪ জন ব্যক্তি ও ২৯টি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা তাদের উপরই দেয়া হয়েছে যারা সামরিক জান্তার হয়ে সহিংসতা ও নৃশংসতা পরিচালনা করেছে এবং করতে সহায়তা করেছে।

“যতোদিন পর্যন্ত সামরিক শাসকেরা বার্মার জনগণের গণতান্ত্রিক দাবীকে অস্বীকার করবে, আমরাও সামরিক বাহিনী ও তাদের সমর্থকদের উপর আরো বেশি কঠোর হওয়া অব্যাহত রাখব,” সামরিক অভ্যুত্থানের এক-বছর পূর্তিতে  প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই কথা বলেছিলেন।

এরপর ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বার্মার উপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলনে আরো বেশি সহায়তা অনুমোদনের লক্ষ্যে প্রণীত বার্মা ইউনিফাইড থ্রু রিগোরাস মিলিটারি অ্যাকাউন্টাবিলিটি অ্যাক্ট-এ স্বাক্ষর করেন।

পুড়ে যাওয়া ভবন এবং গাছ (© এপি)
২০২১ সালের ২৬ জুন মধ্য বার্মার কিনমা গ্রামের ঘরবাড়ি ধুঁকে ধুঁকে জ্বলছে, এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন সামরিক বাহিনী গ্রামটি পুড়িয়ে দিয়েছে, অ্যাসোসিয়েট প্রেসের রিপোর্ট। (© এপি)

বার্মার সামরিক জান্তা সে দেশের জনগণের উপর সহিংস নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সামরিক অভ্যুত্থানের পর ২,৪০০ এরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং ১৬,০০০ এরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নৃশংস সহিংসতার মধ্যে রয়েছে:

  • ২০২২ সালের জুলাই মাসে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন কর্মী ফিও জেয়া থাও, কো জিমি, হ্লা মায়ো অং এবং অং থুরা জাও এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।
  • ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর কাচিন রাজ্যে একটি জাতিগত সম্প্রদায়ের সমাবেশেআকাশ থেকে বোমা হামলা চালালে ১০০ জনের মতো মানুষ নিহত হয়।
  • ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরএকটি স্কুলে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালালে কমপক্ষে ১১টি শিশু নিহত হয়।
  • সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে বার্মায় লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যুত্থানের পরের মাসগুলোতে ১,০০০ এরও বেশি নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
কোলাজ ছবিতে কো জিমি এবং ফিও জেয়া থাও (©এপি)
বাঁয়ে ২০১২ সালে তোলা ছবিতে কিয়াও মিন ইউ-কে দেখা যাচ্ছে যিনি কো জিমি নামেই বেশি পরিচিত এবং ডানে ২০১৫ সালে তোলা ছবিতে ফিও জেয়া থাও-কে দেখা যাচ্ছে। বার্মার সামরিক জান্তা যে গণতন্ত্রকামীদের মৃত্যুদণ্ড ২০২২ সালের জুলাইয়ে কার্যকর করেছে তাদের মধ্যে এই দুইজনও রয়েছেন। (© এপি)

বার্মায় সংঘটিত নৃশংসতা তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মায়ানমার বার্মায় আন্তর্জাতিক আইনের সর্বাধিক গুরুতর লংঘনের প্রমাণ সংগ্রহ করছে। তদন্ত এবং ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের সুরক্ষায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র ২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বার্মিজ সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সামরিক বাহিনীর আক্রমণগুলোতেও যুক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মিজ সামরিক বাহিনীর নৃশংসতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বার্মার বিরুদ্ধে দায়ের করা গাম্বিয়ার মামলাকে সমর্থন করে জানিয়েছে যে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বার্মার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আনীত রেফারেলকে সমর্থন করবে।

সামরিক অভ্যুত্থানের ২ বছর, আমরা বার্মার জনগণের পাশেই আছি

যুক্তরাষ্ট্র বার্মার জবাবদিহিতার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আহ্বানকেও সমর্থন করে। ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনীত এক প্রস্তাবে বার্মার সামরিক জান্তাকে সহিংসতার অবসান, নির্বিচারে আটক সকল বন্দীদের মুক্তি, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সুরক্ষা এবং সেখানে মানবিক সহায়তার প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বার্মার সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা লোকদের জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা, আশ্রয়, অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্যের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মানবিক সহায়তা দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বার্মার সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বার্মা, বাংলাদেশ ও অন্যত্র ১.৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বার্মার জনগণকে সমর্থন করছে এবং তারা যাতে তাদের নিজেদের ভবিষ্যত নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারে,” সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি বার্মার স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ৩ জানুয়ারি এই কথা বলেন। তিনি আরো বলেন যে, “বার্মার জনগণের নিজ দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যে সংকল্প আমরা তার সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।”