এক টুকরো ফল অনুপ্রাণিত করেছিল একটি স্বপ্নকে। আর প্রসারিত করেছিল একটি ব্যবসাকে। এ হচ্ছে জাহাঙ্গীর গিয়াসভের কাহিনী।
উজবেকিস্তানের জাহাঙ্গীর গিয়াসভ জাপান বেড়াতে গিয়ে আম খেয়ে দেখেছিলেন। তো, ফলটির স্বাদ গিয়াসভকে ব্যাপক অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি তখনই নিজের দেশ থেকে ফল রপ্তানি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডি -র সহায়তায় গিয়াসভ উজবেকিস্তানে আপেল আর তরমুজ বিক্রির ভাবনাকে বাস্তবে রূপও দেন।
`বিশ্বের বাজারে উজবেক ফল ও সবজির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএসএআইডির সহায়তার বদৌলতে আমরা সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি’, বললেন গিয়াসভ।

উজবেক জনগণের পঁচিশ শতাংশই কৃষিকাজ করেন। দেশটির জলবায়ু ফল চাষের জন্য আদর্শ। কিন্তু অনেক স্থানীয় কৃষকের কাছেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার মতো অর্থসম্পদ নেই।
জাপান থেকে ফিরে গিয়াসভ ফল সংরক্ষণ ও প্যাকেট করার কৌশল শেখেন। এর সুবাদে একদিন তিনি বিদেশে ফল পাঠাতেও সক্ষম হন। ইউএসএআইডি তাদের `প্রতিযোগিতা, বাণিজ্য এবং চাকরি সংক্রান্ত কার্যকলাপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০% শতাংশ খরচ বহন করে। এতে করে গিয়াসভ ফল কাটা এবং শুকানোর সরঞ্জাম কিনতে সক্ষম হন। তিনি বিদেশে শুকনো আপেল বিক্রি করতে পারেন প্রতি কেজি ৩ ডলার করে। যেখানে প্রতি কেজি আপেলের গড় দাম মাত্র ২ ডলার। গিয়াসভ একসময় আরও আটজন শ্রমিক নিয়োগ করেন। ফসল কাটা ও প্রক্রিয়াকরণের ভরা মৌসুমে কারখানায় ৫০ জন পর্যন্ত মৌসুমী শ্রমিক নিয়োগ দিতে হয় তাকে। ২০২২ সালে ফলন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন গিয়াসভ।
তাজিকিস্তানের অ্যাপ্রিকট বিপণন
তাজিকিস্তানের একজন ক্ষুদ্র অ্যাপ্রিকট উৎপাদনকারী হিসেবে পুলত আশুরভের খামারের ফলন রপ্তানি বাজারে প্রবেশের মতো যথেষ্ট ছিল না। এজন্য তিনি ইউএসএআইডির ‘উৎপাদনশীল কৃষি প্রকল্প’র সহায়তায় কোল্ড স্টোরেজ কেনেন। এর সুবাদে প্রতিবেশী কৃষকদের কাছ থেকে যথেষ্ট অ্যাপ্রিকট সংগ্রহ করলেন আশুরভ। এখন আর রপ্তানি করায় কোন সমস্য থাকলো না।
তাজিকিস্তানের উত্তর সীমান্তের সুগদ প্রদেশে আশুরভের অ্যাপ্রিকট বাগান। তিনি তার আয় বাড়া ও তাজিকিস্তান থেকে অ্যাপ্রিকট রপ্তানি করা সম্ভব করে তোলার কৃতিত্ব দেন ইউএসএআইডি-র প্রকল্পটিকেই ।

উজবেকিস্তানের উর্বর জমিতে বহুদিন ধরেই সুস্বাদু অ্যাপ্রিকট হয়ে আসছে। এখন আশুরভের বাগান থেকে আরও বেশি ফল রপ্তানির সুযোগ হয়েছে।(ইউএসএআইডি)
পুলত আশুরভ বিগত বছরগুলোতে রাশিয়ায় ১৪ মেট্রিক টনের মতো অ্যাপ্রিকট রপ্তানি করেছিলেন। ২০১৯ সালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে পাঠিয়েছে ৬৮০ মেট্রিক টন ফল ।
পুলত বলেন, ‘‘আমার এবং তাজিকিস্তান জুড়ে অন্যান্য অনেক ফল ব্যবসার সূচনা হল ইউএসএআইডি-র সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব। এটি আমাদের পণ্যের গুণমান এবং নিরাপত্তা তুলে ধরতে সহায়তা করেছে।… ভোক্তারা আমাদের সঠিকভাবে পাকা এবং সুন্দরভাবে প্যাকেট করা অ্যাপ্রিকটের স্বাদ পেলে আমরা সেই বাজারে একটি বিশেষ জায়গা করে নিতে পারি।’
পুলত আশুরভ ইউএসএআইডি-র `প্রতিযোগিতা, বাণিজ্য এবং চাকরি সংক্রান্ত কার্যকলাপ’ প্রকল্প থেকে পাওয়া শিক্ষা প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ায় পুলত মৌসুমী কর্মচারী ছাড়াও আরও ৬০ জন কর্মচারি নিয়োগ করেন।
তুর্কমেনিস্তানের আপেল চাষীদের পরামর্শ দেওয়া
মেসেলি মেসেলিয়েভ তুর্কমেনিস্তানের একজন আপেল চাষী। তার বাগানটি এ শিল্পের সহযোগীদের একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে। আপেল তুর্কমেনিস্তানের ফল শিল্পের একটি প্রধান অংশ। দেশের কৃষি উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ আসে মেসেলিয়েভের নিজের প্রদেশ আহাল থেকে।
ইউএসএআইডি-র `প্রতিযোগিতা, বাণিজ্য এবং চাকরি সংক্রান্ত কার্যকলাপ’ প্রকল্প থেকে মেসেলিয়েভ নতুন সারের কৌশল, মাটি তৈরি করা এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শিখেছেন। ২০২০ সালে তার ফসলের উৎপাদন ছিল আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণ!

তুর্কমেনিস্তানে ইউএসএআইডি-র অংশীদার, শিল্পপতি এবং উদ্যোক্তা ইউনিয়ন মেসেলিয়েভের বাগানকে খামারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে।
মেসেলিয়েভ বলেন, ‘ইউএসএআইডি-র কল্যাণে আমি সঠিকভাবে ডালপালা ছাঁটাই, ঠিকমত সার প্রয়োগ, সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে সেচ দেওয়া এবং রোগ ও কীটপতঙ্গের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করার কায়দা শিখেছি।’