মানবপাচার রোধ ও ভুক্তভোগীদের সহায়তায় কাজ করছেন সার্ভাইভরেরা

দুই নারীর ছবি (বামে: © কিম ফন উসটেন/ক্যাথলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন। ডানে: তানিয়া গোউল্ড (তানিয়া গোউল্ডের সৌজন্যে)
বামে: হলি অস্টিন গিবস (© কিম ফন উসটেন/ক্যাথলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন) ডানে: তানিয়া গোউল্ড (তানিয়া গোউল্ডের সৌজন্যে)

মানবপাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই রয়েছেন। মানবপাচারের হাত থেকে বেঁচে ফেরা মানুষেরা ক্রমশই এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং ভুক্তভোগীদের সেরে উঠতে সহায়তা করছেন।

অপরাধীরাই মূলত ভুক্তভোগীদের বলপূর্বক শ্রম ও যৌন উদ্দেশ্যে মানবপাচারের দিকে ঠেলে দেয়। সমস্যাটির পরিধি বুঝতে কেবল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসেবের দিকে নজর দিলেই চলে, যেখানে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের যেকোনো সময়ে:

  • ২১ মিলিয়ন মানুষ শাস্তি বা ক্ষতির মুখে কারখানা, খামার, বা গৃহস্থালী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
  • ৬ মিলিয়ন মানুষ – প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু (৯৯% নারী) – যৌনখাতে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।
জানালায় দেখা যাচ্ছে গৃহস্থালী কাজে সহায়তার জন্য চাকরির বিজ্ঞাপন (© অ্যারন ফাভিলা/এপি)
মধ্যপ্রাচ্যে কাজের জন্য ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে নারীদের নিয়োগের বিজ্ঞাপন। দেশটি সেসব অবৈধ বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কাজ করছে, যেগুলো মানবপাচারকারীদের সহায়তা করছে। (© অ্যারন ফাভিলা/এপি)

২০১০ সাল থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট জানুয়ারি মাসকে জাতীয় মানবপাচার মোকাবিলার মাস হিসেবে উৎসর্গ করেছেন এবং ১১ জানুয়ারি মানবপাচার সচেতনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। (১১ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যমে #উইয়্যারব্লুডে আয়োজন করতে যাচ্ছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি।)

অন্যদের সুরক্ষায় বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা

হাস্যোজ্জল এক নারীর ছবি (তানয়া গোউল্ডের সৌজন্যে)
তানিয়া গোউল্ড (তানিয়া গোউল্ডের সৌজন্যে)

মানবপাচারের হাত থেকে বেঁচে ফেরা দুই নেতা শেয়ার আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেছেন বিশেষভাবে অল্পবয়সীদের সুরক্ষা নিয়ে।

ভার্জিনিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের মানবপাচার বিরোধী পরিচালক, তানিয়া গোউল্ড এই সমস্যা মোকাবিলায় রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে বেঁচে ফেরাদের দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছেন।

গোউল্ড বলেছেন, অভিভাবকদের অবশ্যই “ইন্টারনেটে অভিভাবকদের নজরদারিকে” অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ, কারণ মানবপাচারকারীরা প্রায়ই অনলাইনে কমবয়েসী শিকার খোঁজে। “আপনার শিশুকে শেখান যে যৌনতা কেনা ঠিক নয়। সব কিছু বিক্রির জন্য নয়, এবং যৌনতা ও অন্তরঙ্গতার কোনো মূল্য হয় না।”

তিনি বলেন, স্কুলের কর্মকর্তাদের তাদের প্রভাব-বলয়ে থাকা পাচারকারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সনাক্তকরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিৎ। এছাড়া, শিশুদের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের জানা উচিৎ যে মানবপাচারের সন্দেহ হলে কীভাবে রিপোর্টিং প্রোটোকল ব্যবহার করতে হয়।

পিতামাতা ও অভিভাবকেরা নিজেদের শিক্ষিত করে তুলতে পারেন বেঁচে ফেরাদের ভিডিওগুলো দেখে, যেখানে তারা নিজেদের গল্পগুলো বলেছেন; সেসব অ্যাপগুলোর সম্পর্কেও শিখতে পারেন, যেগুলো পাচারকারীরা কমবয়েসীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে। গোউল্ড বলেন “ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার টুলগুলো সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জানতে হবে, এবং কিছু সুরক্ষা কোড তৈরি করতে হবে” যেগুলো শিশুরা টেক্সট করতে পারে। ফোন থেকে পাঠানো একটি প্রতীক বা শব্দ আপনাকে জানাতে পারে যে আপনার সন্তান বিপদে আছে।

বিপদ সনাক্ত করা

রিচমন্ড, ভার্জিনিয়ার হলি অস্টিন গিবস, কমনস্পিরিট হেলথ হসপিটাল চেইনের মানবপাচার সংক্রান্ত সাড়া প্রদান প্রকল্প পরিচালনা করেন যা ভুক্তভোগীদের চিহ্নিতকরণ ও সহায়তার জন্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সাহায্য করে। তিনি ওয়াকিং প্রে: হাউ আমেরিকা’স ইউথ আর ভালনারেবল টু সেক্স স্লেভারি বইয়ের লেখক এবং মানবপাচার থেকে বেঁচে ফেরাদের জন্য প্রচারণা চালান।

“পাচারকারীরা যে কোনো বয়সী ভুক্তভোগীকে জোর করে, প্রতারণার মাধ্যমে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যৌন কর্মকাণ্ড বা কোনো শ্রম বা অন্যান্য সেবাদানে বাধ্য করে,” বলেছেন তিনি। টোপ দেখিয়ে টেনে আনার চিরচেনা পদ্ধতির মাধ্যমে, পাচারকারীরা ভু্ক্তভোগীদের প্রতি সহমর্মিতা ও মনোযোগ দেখায়, এবং বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। এবং পরবর্তীতে তারা সহিংস হয়ে ওঠে।

যে কোনো বয়স, জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গের মানুষকে সম্ভাব্য শিকার বানানো হয়। এবং সম্প্রতি স্থানান্তরিত, অ-নথিভুক্ত বা নড়বড়ে অভিবাসন মর্যাদার, ভাষাগত বাধার মুখে পড়া বা সামাজিক, পারিবারিক সহায়তার অভাবে ভোগা কিছু ভুক্তভোগীকে উদ্ধৃত  করে গিবস বলেন, পাচারকারীরা দুর্দশার মধ্যে থাকা মানুষদের লক্ষ্য বানায়। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে থাকলেও, এই অপরাধটি বিশ্বের প্রত্যেক অঞ্চলে পুরুষদেরও ক্ষতি করছে।

পাচারকারীদের কৌশল সম্পর্কে অভিভাবক, শিক্ষক ও তরুনদের শিক্ষিত করে তোলা এবং এই ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা জরুরি বলেও তিনি জানান।

ডেস্কে ল্যাপটপের সামনে বসে আছেন এক নারী (© কিম ফন উসটেন/ক্যাথলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন)
হলি অস্টিন গিবস (© কিম ফন উসটেন/ক্যাথোলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন)

বেঁচে ফেরাদের নিয়ে কাজ করা দুইটি সংগঠনের কথা উল্লেখ করেন গিবস:  সার্ভাইভর অ্যালায়েন্স যা ফিরে আসাদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-ভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন, কোয়ালিশন টু অ্যাবোলিশ স্লেভারি অ্যান্ড ট্রাফিকিং-এর প্রকল্প, ন্যাশনাল সার্ভাইভর নেটওয়ার্ক। তিনি বলেন, “আপনি যদি সার্ভাইভর হন, তাহলে দয়া করে নিরবে ভুগবেন না।”