
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মকালীন আনন্দ-আড্ডা, কেন্দ্রে আছে আউটডোর গ্রিলিং এবং বারবিকিউ। বিশেষ করে চৌঠা জুলাইয়ে এটি বেশি জনপ্রিয়।

শুধু হট ডগ আর হ্যামবার্গারেই শেষ নয়। জিহ্বায় জল আনা বারবিকিউ – আগুনের শিখা বা গরম কয়লায় ধীরে রোস্ট করা মূলত মাংসের খাবার – ভীষণ জনপ্রিয়। এবং আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তার ওপর ভিত্তি করে বারবিকিউয়ের স্টাইল বদল হয়, বলেন খাবারের ইতিহাসবিদ এবং ব্ল্যাক স্মোক: আফ্রিকান আমেরিকানস অ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব বারবিকিউ বইয়ের লেখক অ্যাড্রিয়ান মিলার। মেনুতে গ্রিল করা সবজি থাকে একেকরকম, তবে স্থানীয় খাদ্যরসিকেরা এলাকাভিত্তিক আলাদা রেসিপির কথাই বলবেন – যার মূলে থাকতে পারে মাংস কাটার বিশেষ রীতি, রান্নার কৌশল বা কোনো সসের উপরকরণ।
মাংস-প্রেমী সাউথে আপনি যদি ক্যারোলাইনায় ঘোরেন, আপনি দেখবেন সেখানে মনোযোগটা পর্ক বারবিকিউয়ে, যা শিকে রান্না করা পর্কের ঘাড়ের মাংস অথবা হোল হগ দিয়ে তৈরি। আরো দক্ষিণে চলে যান – অ্যালাবামা, জর্জিয়া এবং মিসিসিপি – দেখবেন পর্কের সমান জনপ্রিয় চিকেন বারবিকিউ।
কানসাস সিটি এলাকার রেস্তোরাগুলো তাদের গ্রিলড মাংসে দেয়া মিষ্টি, গুড়ের সসের বড়াই করবে। ইস্টার্ন টেক্সাসে গিয়ে খাদ্যরসিকেরা খুঁজবেন “টেক্সাস ট্রিনিটি (ব্রিসকেট, সসেজ এবং পর্কের শিনা)।
শিকাগোতে যেতে হয় পর্কের শিনার টিপ (কুচি কুচি করা কাটা শিনার মাংস) অথবা চিকেন খেতে। অথবা টেনেসির মেমফিসে ছুটে গেলে পাবেন পর্কের ওপর মসলার পুরু আস্তরণ। সেখান থেকে সেইন্ট লুইসে গেলে পাবেন “স্নুট” (পর্কের গলা এবং নাক)।
রেসিপির উৎস
মিলার বলেন, আমেরিকান বারবিকিউয়ের পেছনে আছে শক্ত নেটিভ আমেরিকান ভিত্তি। তিনি বলেন, মাংস স্মোক ও গ্রিল করার জন্য ঘুরন্ত শিক, উঁচু প্ল্যাটফর্ম এবং অগভীর চুলা ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে প্রথম যুগের আফ্রিকান আমেরিকান রাঁধুনিরা নেটিভ আমেরিকান কৌশল আত্মস্থ করেছিলেন।
আমেরিকানরা আজকের দিনে যে বারবিকিউ চেনে, সেটা ১৭০০ সালের দিকে ভার্জিনিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনকারীরা যখন দাস আফ্রিকানদের খাবার রান্নায় বাধ্য করত, তখন ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করেছে। আফ্রিকান আমেরিকানরা দক্ষ বারবিকিউ রাঁধুনিতে পরিণত হয় এবং তখন থেকে তারা বারবিকিউকে জনপ্রিয় করতে থাকে। তাদের রান্নার পদ্ধতি বিবর্তিত হতে হতে তৈরি হয়েছে আজকের বিভিন্ন জনপ্রিয়, আঞ্চলিক বারবিকিউ স্টাইল।
মিলার বলেন, খাঁটি “সাউদার্ন বারবিকিউ” দেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে দিতে কৃষ্ণাঙ্গ বারবিকিউ রাঁধুনিরা নৌকা, জুড়িগাড়ি আর ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “বহুকাল ধরে আফ্রিকান আমেরিকানরাই ছিলেন বারবিকিউয়ের সবচেয়ে কার্যকর দূত।” প্রায়শ তারাই শহরাঞ্চলে বারবিকিউ বিক্রির প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন, যারা কখনও বাসা থেকে, কখনও গলিতে অথবা কখনও রেস্তোরাঁয় বিক্রি করেছেন।
মিলার বলেন, বিংশ শতকে বারবিকিউ পল্লী এলাকা থেকে শহুরে জিনিসে পরিণত হয়, তখন আঞ্চলিক স্টাইলগুলো আকার নিতে শুরু করে, মাঝে মাঝে কোনো শহরের সঙ্গে সেটার নাম জুড়ে যায়।
পারিবারিক সূত্র

৭০ বছর বয়সী ইয়ার্লিন ওয়াকার ও তার স্বামী ওটিস ১৯৯৭ সালে চালু করার পর থেকেই সেইন্ট লুইসের বিখ্যাত নাম “স্মোকি ও’জ বিবিকিউ অ্যান্ড ক্যাটারিং”। সারা দুনিয়া থেকে কাস্টোমাররা আসে এখানে।
তারা খেতে আসে এই রেস্তোরাঁর বিখ্যাত বারবিকিউ করা পিগ স্নুট, যা টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ইয়ার্লিন ওয়াকার বলেন, এখানকার স্নুট বেকনের মতোই ফ্লেভারবিশিষ্ট এবং মেক্সিকান চিচারোনের মতোই কুড়মুড়ে। তিনি বলেন. “ওর মধ্যে বারবিকিউ সস দেয়া থাকে, যা স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়।”
ওয়াকার দম্পতি তাদের রেস্তোরাঁ চালু করেন ওটিসের মায়ের রেসিপি দিয়ে, যিনি ১৯৪০-এর দশকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মিসিসিপি ছেড়ে সেইন্ট লুইসের একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতে এসেছিলেন। ইয়ার্লিনের মতে, মায়ের মৃত্যুর পর ওটিস নিজের রেস্তোরাঁ খুলতে চেয়েছেন, কারণ “তার মায়ের মতো বারবিকিউ আর কেউ বানাতে পারে না।”
স্মোকি ও’জ এই জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অংশ হয়ে উঠেছে। ওয়াকার দম্পতি প্রায়শই স্থানীয় যুবাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করেন, তারা ১৬ জন শিক্ষার্থীর কলেজ শিক্ষার খরচ যোগান। করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে স্মোকি ও’জ স্থানীয় দমকল ও পুলিশ বিভাগকে লাঞ্চ সরববাহ করে আসছে।
ওটিস বলেন, তিনি আর তার স্ত্রী তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠার জায়গার কাছেই বসবাস করেন, “সে কারণেই সাহায্য করা আর সবার যত্ন নেওয়া আমাদের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
