অবৈধভাবে মাছ ধরা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশল

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড বিশ্বের বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নতুন কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড বলেছে যে, অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মাছ ধরা সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলদস্যুতাকে প্রতিস্থাপন করে প্রধান হুমকিতে পরিণত হয়েছে। আর তাই, নতুন এই কৌশলে অবৈধভাবে মাছ ধরা মোকাবেলায় আরো বেশি যৌথ কর্মকাণ্ড এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেয়া হয়েছে।

অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা হলো অসাধুভাবে মাছ ধরার সম্মিলিত কর্মকাণ্ড, যা একটি দেশের আভ্যন্তরীণ জলসীমানায় এবং নিজ জলসীমার বাইরে গভীর সমুদ্রে, উভয়ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড আমিষের উৎস হিসেবে বিশ্বব্যাপী মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য হুমকিস্বরূপ এবং আইন ও নিয়ম মেনে চলা কর্মকাণ্ডকে দুর্বল করে তুলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড প্রধান অ্যাডমিরাল কার্ল শুল্টজ গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মাছ ধরা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলপত্রে লিখেছেন, “যদি আইইউইউ মাছ ধরা অবাধে চলতে থাকে, তবে সমুদ্র-উপকূলবর্তী দুর্বল দেশগুলোতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এবং মাছ ধরায় নিয়োজিত বিদেশী-রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে, যা বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড অবৈধভাবে মাছ ধরা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে গত ১৩ মার্চ প্রশান্ত মহাসাগরে টহল দিচ্ছে। (ইউ.এস. কোস্ট গার্ড)

নতুন কৌশলের আওতায় কোস্ট গার্ড আরো সুনির্দিষ্টভাবে ও গোয়েন্দা-তথ্যভিত্তিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে অবৈধভাবে মাছ ধরার বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা প্রচেষ্টাকে আরো উন্নত করতে পারবে। এছাড়াও এই কৌশলে প্রয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে সমুদ্র সংক্রান্ত উন্নত আচরণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরো বেশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার কারণে কাজ কিংবা খাদ্যের জন্য মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিগ্রস্ত। কোস্ট গার্ড প্রণীত অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা মোকাবেলা কৌশলে বলা হয়েছে, অবৈধ মাছ শিকারীরা প্রতি বছর ২৬ মিলিয়ন টন মাছ ধরার ফলে বৈধ মৎস্যজীবীদের কয়েক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।

কৌশলটিতে বলা হয়েছে, “লুণ্ঠনকারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন রাষ্ট্রগুলো তাদের আগ্রাসী অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রয়োগে একটি বিশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা জিইয়ে রাখতে আইইউইউ মাছের অবৈধ বাজারের বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে এবং এর মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী অবাধ ও উন্মুক্ত গণতন্ত্রকে দুর্বল, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়।”

উদাহরণস্বরূপ, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের পতাকাবাহী মাছ ধরার জাহাজের বিশাল বহরগুলো অন্যান্য দেশের মাছ ধরার অধিকার, ব্যবসা ও সমুদ্রের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে, যেমন সম্প্রতি ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের (ইকোসিস্টেম)  কাছে মাছ ধরার এক ঘটনা ঘটিয়েছে

আইইউইউ মাছ ধরার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লড়াইয়ের সর্বাগ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের প্রচেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) টেকসইভাবে মাছ ধরার জন্য প্রতিবছর এক ডজনেরও বেশি দেশে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে থাকে। ইউএসএআইডি-র আর্থিক সহায়তায় কেনা মনিটরিং সরঞ্জাম ব্যবহার করে জেলেরা প্রমাণ করতে পারেন যে তাদের ধরা মাছ বৈধ, ফলে তারা তাদের ধরা মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয় করা নিশ্চিত করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের নতুন কৌশলে অংশীদার দেশগুলোর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে তারা যেন পুরো পশ্চিম গোলার্ধজুড়ে ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো এবং আফ্রিকার সমুদ্র উপকূলে সকল ধরনের অবৈধ, অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মাছ ধরা বন্ধে ব্যবস্থা নেন।

এছাড়াও, অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া-সহ অংশীদার দেশগুলোর সাথে তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা উন্নত করবে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র মন্দ কাজে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যে কোনও অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নেবে।

“এটি সার্বভৌম দেশগুলোর জিডিপির সুরক্ষা, তাদের জীবিকার নিরাপত্তার সাথে জড়িত বিষয়,” উল্লেখ করে অ্যাডমিরাল শুল্টজ গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ আয়োজিত নতুন কৌশল বিষয়ক এক আলোচনায় বলেছেন, “আইইউইউ মাছ ধরা একটি দেশের টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণের সামর্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।”