যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রতিবন্ধীদের জন্য ভোটদান সহজ করেছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক আইন (এডিএ, ADA), ১৯৯০’র কল্যাণে আমেরিকার জনগণ যখন তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে তখন সারাদেশের ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

২০১১ সালে অবসর নেবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস’র প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিভাগের প্রধান ছিলেন জন উওড্যাচ, তিনি  বলেছেন, “নির্বাচন যিনিই করুন না কেন তাঁর দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা।”

এডিএ’র মাধ্যমে ২০০২ সালের হেল্প আমেরিকা ভোট আইনটির পথ প্রশস্ত হয়েছে, যার আওতায় নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত একটি যন্ত্র সরবরাহ করা আবশ্যক যা অন্ধ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটাররা স্বাধীন ও গোপনীয়ভাবে পরিচালনা করতে পারবে।  যন্ত্রটিকে অবশ্যই যথাযথভাবে স্থাপনও করতে হবে।  ১৯৬৫ সালের ঐতিহাসিক ভোটদানের অধিকার বিষয়ক আইন মোতাবেক প্রতিবন্ধী ভোটারদেরকে মেশিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মীদের প্রস্তত থাকতে হবে এবং সহায়তা চাইলে তাঁদেরকে যন্ত্র ব্যবহারে সহায়তা দিতে হবে।

বিশেষ ব্যালট মেশিন দিয়ে একজন পুরুষ ভোট দিচ্ছেন (© রোহেলিও ভি. সোলিস/এপি ইমেজেস)
মিসিসিপির জ্যাকসনে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য তৈরি বিশেষ একটি যন্ত্র ব্যবহার করছেন বার্নেল জিউট। (© রোহেলিও ভি. সোলিস/এপি ইমেজেস)

উওড্যাচের ভাষায়, ২০০২ সালের উক্ত আইনের আগে এডিএ’র আওতায়ও ভোটকর্মীদের জন্য শ্রবণ প্রতিবন্ধী ভোটারদেরকে নির্দেশনা দেয়ার আবশ্যকতা ছিলো। উওড্যাচ বলেন, এডিএ’র আওতায় বিকাশজনিত প্রতিবন্ধী ভোটারদেরকেও সহায়তা দেয়ার এমনকি প্রয়োজন হলে ব্যালট পেপারে চিহ্ন দিতে সহায়তা করার আবশ্যকতাও রয়েছে ভোটকর্মীদের জন্য।

ভোটযন্ত্র বা ব্যালট রিডারের উচ্চতা এমন হওয়া আবশ্যক যাতে সেটা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ভোটারদের জন্য সুবিধাজনক হয়।

এবোনি ফ্রিম্যান ২০১৫ সালে যখন প্রথম ভোট দিয়েছিলেন সে সময় ভোটকেন্দ্রে কর্মরত একজন “অত্যন্ত দয়ালু ব্যক্তি”র কথা স্মরণ করেন যিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তাঁর কোন সহায়তা লাগবে কিনা।  ফ্রিম্যানের রয়েছে ফাইব্রোমায়ালজিয়া ও সিস্টেমিক লুপাস এরিথিমাটোসিস রোগ যার কারণে শরীরে ক্লান্তি ভর করে।  তিনি সেই সহায়তার প্রশংসা করেন এবং কাজটি তিনি একাই করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

ফ্রিম্যান বলেন, “আমার অক্ষমতার কারণে প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পেরেছি কিনা নিশ্চিত হতে আমি কিছুটা বেশি সময় নিয়েছিলাম।”

ভ্যানে বসে একজন নারী কার্বসাইডে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন (© গ্রেগরি বুল/এপি ইমেজেস)
সান ডিয়েগোতে ফুটপাতের পাশে বিশেষ ব্যবস্থায় ভোট দেয়ার সময় ব্যালট পড়ে দেখছেন ফেলিসিটা সুভিটা। (© গ্রেগরি বুল/এপি ইমেজেস)

প্রবেশযোগ্যতা বা সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে ভোটদানের হার বাড়ে

এডিএ’র আওতায় সকল ভোটকেন্দ্রের প্রবেশদ্বার, পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং চলাচলের পথগুলো সহজে ব্যবহারযোগ্য করা আবশ্যক। হাঁটাচলায় সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিরা যাতে সহজে ঢুকতে বা বেরুতে পারেন সেটা নিশ্চিত করেন দায়িত্বরত কর্মীরা। তাছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাগণ এটাও নিশ্চিত করেন যাতে তাঁরা সহায়ক প্রাণী সাথে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন।

কিছু পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাগণ যখন সহজে ব্যবহারযোগ্য বা অস্থায়ীভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সম্ভব এমন কোন স্থানকে ভোটকেন্দ্র হিসাবে নির্ধারণ করতে অসমর্থ হন, তখন তাঁরা বিকল্প পন্থা গ্রহণ করেন, যেমন ফুটপাতের পাশে ভোটদানের বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য সশরীরে উপস্থিত না হয়ে ভোটদানের বিশেষ ব্যালটের ব্যবস্থা থাকলেও তা নির্বাচনের দিনে সশরীরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানের সমকক্ষ কিছু নয়।

ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তাগুলোও সহজে ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটারদের ক্ষেত্রে এর অর্থ হলো ভবনের অভ্যন্তরে বা ফুটপাতে কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না যেমন কোন সাইনবোর্ড বা গাছের বর্ধিত ডাল। ডালগুলোকে অবশ্যই ছেঁটে দিতে হবে যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ভোটাররা কোনভাবে আঘাত না পান।

সহজ ভোটদান প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস এডিএ  অনুসারে ভোটকেন্দ্রের জন্য যাচাই তালিকা এবং  ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের পাঁচটি সাধারণ সমস্যার সমাধান প্রণয়ন করেছে। কোন ভোটকেন্দ্রে অধিকাংশ প্রতিবন্ধী ভোটারের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি আছে কিনা কিংবা অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সুবিধাগুলো তৈরি করা যায় কিনা সেটা নির্ণয় করতে কর্মকর্তাগণ এগুলো ব্যবহার করেন।

ভোটকেন্দ্রগুলো সহজে ব্যবহারযোগ্য না হলে ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বিভাগগুলো সাধারণত স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে আইনানুগ কোন সমাধানে পৌঁছায়।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ইলেকট্রোরাল সিস্টেম’র অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বৈশ্বিক উপদেষ্টা ভার্জিনিয়া অ্যাটকিনসন বলেন, “এটা এমন একটি বিষয় যা আগে বা অন্য কোন দেশে দেখা যায়নি।”

এডিএ এবং হেল্প আমেরিকা ভোট অ্যাক্ট’র আওতায় আবশ্যকীয় পরিবর্তনগুলো সুফল বয়ে আনছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অনুযায়ী ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১ কোটি ৬০ লাখেরও অধিক প্রতিবন্ধী নাগরিক ভোট দিয়েছেন।  এই সংখ্যা আগের চেয়ে বেশি কেননা পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ১ কোটি ৫৬ লাখ প্রতিবন্ধী নাগরিক।

উওড্যাচ বলেন, “আমেরিকার মুলনীতির অন্যতম ভিত্তি হলো ভোটাধিকার তথা সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার। কোন অধিকারই এর চেয়ে বেশী জরুরী হতে পারে না।”