যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জলাভূমি দিবসে এবং প্রতিদিনই জলাভূমি রক্ষায় দেশটির যে অঙ্গীকার তার বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে।
জলাভূমি সর্বত্রই রয়েছে, সেটা স্থলভাগ ও উপকূলীয় অঞ্চল দুই জায়গাতেই রয়েছে, এবং এই জলাভূমি পৃথিবী ও এর বাসিন্দাদের সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। জলাভূমি বিশ্বের সবচেয়ে দরকারি ও উপকারি বাস্তুতন্ত্র বা ইকো-সিস্টেমের অন্যতম উপাদান। যেখান থেকে আমরা বিশুদ্ধ খাবার পানি পাই, জলাভূমি আমাদেরকে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বাস্তুসংস্থানের ব্যবস্থা করে। এছাড়াও জলাভূমি অতিরিক্ত পানি অনেকটা স্পঞ্জের মতো শোষণ করে নিয়ে বন্যা প্রতিরোধে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস অফ ইন্টারন্যাশনাল ইম্পোরটেন্স (যা রামসার সনদ নামেও পরিচিত)-এর মতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা উপকূলীয় ও স্থলভাগের জলাভূমির মোট আয়তন প্রায় ১২.১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার — যা কানাডার মোট আয়তনের প্রায় সমতুল্য।
বিশ্বের জলাভূমিগুলো বিশ্বের মোট প্রাণি প্রজাতির ৪০% এর আশ্রয়স্থল এবং জলাভূমি এলাকায় প্রতিবছর নতুন করে ২০০টিরও বেশি মাছের প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে।
উপকূলীয় ও স্থলভাগে অবস্থিত জলাভূমিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫.৫% এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ইপিএ-এর ধারণা মতে, এই জলাভূমির ৯৫% মিঠা পানি এবং বাকি ৫% সামুদ্রিক বা মোহনার জলাভূমি।
তবে রামসার সনদে আরো প্রাক্কলন করা হয়েছে যে, বিশ্বের মোট জলাভূমির প্রায় ৯০ শতাংশ ১৭ শতকের পর থেকে বিলুপ্ত হয়েছে, এবং বাকি যে জলাভূমি রয়েছে সেগুলো বনাঞ্চলের চেয়ে তিন গুণ দ্রুততার সাথে অদৃশ্য হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্য “এলোমেলো, অপ্রয়োজনীয় কিংবা অযাচিতভাবে পরিবর্তন কিংবা বিশৃঙ্খলা থেকে মিঠাপানির জলাভূমির বিশুদ্ধতা ও অখন্ডতা রক্ষা করতে” মিঠাপানির জলাভূমি সুরক্ষা আইন পাস করে। এই আইনের মাধ্যমে উপকূলীয় জলাভূমি এবং সেখানকার বৈচিত্র্যময় প্রতিবেশ/বাস্ত্ততন্ত্রকে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কর্মকান্ড সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়।
আমেরিকার সবচেয়ে ছোট কচ্ছপ — বগ কচ্ছপ — নিউ জার্সির জলাভূমিতে বাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের মিঠাপানি জলাভূমি সুরক্ষা আইন এবং বিপন্ন প্রজাতি উদ্ধার আইন ১৯৯৭ এর কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস এখন বগ কচ্ছপের মতো ক্ষুদ্র প্রাণিগুলোর সংরক্ষণ তদারকি করে।

নিম্নভাগে অবস্থিত ৪৮টি রাজ্যের মধ্যে ফ্লোরিডাতে সবার্ধিক প্রাকৃতিক জলাভূমি রয়েছে। এছাড়াও এই রাজ্যের পুরনো বর্জ্যপানির স্থানগুলোকে জলাভূমি সংরক্ষণ এলাকায় রূপান্তর করে আরো বেশি জলাভূমি তৈরি করা হয়েছে।
পাম বিচ কাউন্টি ওয়াটার ইউটিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট সেখানকার ২০ হেক্টর এলাকাজুড়ে থাকা সাবেক বর্জ্যপানি ব্যবস্থাপনা এলাকাকে সংরক্ষিত জলাভূমি এলাকায় রূপান্তর করেছে। ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া ওয়াকোডাহাটচি জলাভূমিতে পাখিপ্রেমি মানুষকে সেখানকার সংরক্ষিত এলাকায় বসবাসকারী ১৭৮টিরও বেশি প্রজাতির পাখি দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ সবসময় স্বাগত জানিয়ে থাকে।
নিম্নভাগে অবস্থিত ৪৮টি রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাভূমি এলাকার অধিকারী হলো মিনেসোটা। এই রাজ্যের জলাভূমিগুলো ফেডারেল, রাজ্য ও স্থানীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে রক্ষা করা হচ্ছে। ১৯৭২ সালের ক্লিন ওয়াটার অ্যাক্ট এর মাধ্যমে মিনেসোটার জলাভূমিগুলো ফেডারেল আইনের অধীনে সুরক্ষা পাচ্ছে এবং মিনেসোটা ওয়েটল্যান্ডস কনজারভেশন অ্যাক্ট বেসরকারি ও ব্যক্তিগত জলাধারগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষায় কাজ করে।

পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ইপিএ-এর মতে, “জলাভূমি প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা মানুষ এবং মাছ ও বন্যপ্রাণির জীবনে বিভিন্নভাবে উপকারী ভূমিকা পালন করে। এবং এই মূল্যবান কাজগুলো জলাভূমির অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যেরই ফলাফল।”