খাদ্য ও জ্বলানি উৎপাদন এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরমাণু প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে।
পারমাণবিক শক্তির (আনবিক শক্তিও বলা হয়) বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার – এবং অস্ত্র হিসেবে এটি ব্যবহারের ভয় – এই দুই জায়গা থেকে ১৯৫৭ সালে বিশ্বনেতারা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গড়ে তোলেন। এটির কাজ: পরমাণু শক্তির নিরাপদ, সুরক্ষিত ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রসার।
জাতিসংঘ পরিবারের ভেতরেই বিশ্বের “অ্যাটমস ফর পিস” সংগঠন হিসেবে সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালে, প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একই শিরোনামে একটি বক্তৃতা দেওয়ার পর।

জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলেও সংস্থাটি স্বাধীন এবং এটি বাৎসরিকভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে রিপোর্ট করে।
বর্তমানে সংস্থাটির ১৭৫টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে এবং তারা মনোযোগ দেয়:
- শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার প্রসারে।
- পারমাণবিক সুরক্ষা মানদণ্ড এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা গড়ে তোলায়।
- শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মকাণ্ডকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা— তা যাচাইয়ে।
চিকিৎসা, খাদ্য উৎপাদনে উদ্ভাবন
বিস্তৃত পরিসরে পারমাণবিক টুলের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য দেশগুলোকে সহায়তা করে আইএইএ। যার মধ্যে রয়েছে:
বিদ্যুৎ: আইএইএ-র সহায়তায় ৩২টি দেশের ৪০০টিরও বেশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিশ্বের প্রায় ১০% বিদ্যুৎ আসে।
খাদ্য নিরাপত্তা: কৃষিখাতে পারমাণবিক নানা ব্যবহার কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই মোকাবিলা, শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ভূমি ও পানি সম্পদ রক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাহায্য করতে পারে।
চিকিৎসা: পারমাণবিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি আফ্রিকায় দ্রুত ইবোলা সনাক্তকরণ সহ ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ সনাক্ত ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
শান্তিপূর্ণ ব্যবহার যাচাই

পারমাণবিক সামগ্রী যেন অস্ত্র উৎপাদনে চলে না যায়— তা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি যাচাইকারীর ভূমিকা দেওয়া হয়েছে আইএইএ-কে। এটি ১৯৭০ সালের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দেয়। বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় সব দেশ এই চুক্তিতে সাক্ষর করেছে।
আইএইএ-র পরিদর্শকেরা যখন কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় যান, তখন তারা একটি নিরীক্ষা পরিচালনা করেন। তারা সেই নির্দিষ্ট স্থাপনাটির কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করেন এবং সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আইএইএ-কে রিপোর্ট করা তথ্য তুলনা করে দেখেন।
সংস্থাটি বিভিন্ন সেফগার্ড সিল ব্যবহার করে এবং সেখানে কীভাবে নানা সামগ্রী ও উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে— তা নজরে রাখার জন্য ক্যামেরা স্থাপন করে। স্থাপনাটি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সামগ্রী ব্যবহার করছে কিনা— তা যাচাই করার জন্য বিভিন্ন পরিবেশগত নমুনাও সংগ্রহ করতে পারে আইএইএ।

এছাড়াও, পারমাণবিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আইএইএ। এজন্য তারা সুরক্ষা মানদণ্ড তৈরি করে, নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়, এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পারমাণবিক বা রেডিওলজিক্যাল ঘটনা মোকাবিলায় রাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য করে ।