১২ সেপ্টেম্বর কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ

(© ম্যাট ফ্লিন/নাইন ইলেভেন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম/গিফট অফ উইলসন কিমেলি নাইয়োমাহ এবং কেনিয়ার মাসাই জনগোষ্ঠী)
নাইন ইলেভেন’র পর যুক্তরাষ্ট্রের নিকট মাসাই জনগোষ্ঠীর পাঠানো গরু উপহারের বিষয়টি আমেরিকার পতাকায় শোভিত হয়েছে। (© ম্যাট ফ্লিন/নাইন ইলেভেন মেমোরিয়াল মিউজিয়াম/গিফট অফ উইলসন কিমেলি নাইয়োমাহ এবং কেনিয়ার মাসাই জনগোষ্ঠী)

২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসীদের হামলার পর কেনিয়ার মাসাই জনগোষ্ঠী আমেরিকার জনগণের জন্য ১৪টি গরু পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলো।

ধারণাটি যিনি দিয়েছিলেন সেই উইলসন কিমেলি নাইয়োমাহ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, “শোকসন্তপ্ত হৃদয়ের শান্তির জন্য নিজেদের প্রিয় কিছু উপহার দেয়া।”

মাসাই জনগোষ্ঠীর কাছে পবিত্র ও জীবনের প্রতীক এই গরুগুলো তখন সাদরে গৃহীত হয়েছিলো। আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাগণ সম্মত হন যে, যুক্তরাষ্ট্র এই গরুগুলোর “মালিকানা” নেবে, তবে কিছু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা এড়াতে তাঁরা অনুরোধ করেন, মাসাই গরুপালকেরা যাতে গুরুগুলোকে কেনিয়াতে রেখেই পালন করেন।

একটি হতবিহ্বল জাতির প্রতি সারা বিশ্বের মানুষের উদারভাবে সাড়া দেয়ার অন্যতম দৃষ্টান্ত এটি। ১১ সেপ্টেম্বর স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘরের প্রতিপাদ্য্ হলো তাঁদের দয়ার্দ্রতা।

গরুগুলোর একটি চিত্রকর্ম শোভিত এই জাদুঘরের অন্যতম পরিচালক নোয়াহ রাউচ বলেন, মাসাইদের এই অনুভূতিটি ৯/১১’র পর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গৃহীত হয়েছে। এই জাদুঘরে প্রদর্শিত উপকরণসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও আরো কিছু দেশ থেকে প্রেরিত লেপ ও ম্যুরাল।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

৯/১১’র সন্ত্রাসী হামলায় নিউ ইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভ্যানিয়া প্রায় ৩,০০০ মানুষ নিহত হন যাদের মধ্যে ৯০টিরও বেশি দেশের ৩৭২ জন বিদেশীও ছিলেন।

রাউচের মতে, এই জাদুঘর থেকে দর্শনার্থীদের উচিত “৯/১১’তে কী ঘটেছিলো সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে ফিরে যাওয়া। একইসাথে তাঁদের উচিত সেই হামলার প্রেক্ষিতে মানুষ কীভাবে সাড়া দিয়েছিলো সে বিষয়ে কৃতজ্ঞ হওয়া।”

“রাউচ বলেন, “প্রথম উদ্ধারকারী হিসাবে সেদিন যারা টুইন টাওয়ারে ছুটে গিয়েছিলেন, যেসব নির্মাণ শ্রমিক নিজেদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার অভিযান, আহতদের সারিয়ে তোলা এবং পরিস্কারকালে সহায়তা করেছেন, অথবা হামলা পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ যেভাবে সম্ভাব্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন- এর সবই আসলে সেদিনের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে একটি মৌলিক প্রতিরোধ।”

হামলার পরের দিন, ১২ সেপ্টেম্বর ২০০১ তারিখে সারা বিশ্ব থেকে প্রবল সহমর্মিতার বার্তা আসতে শুরু করে। এই সহমর্মিতা আমেরিকার বহু মানুষের মানসিক আঘাত কাটিয়ে ওঠার জন্য সহায়ক হয়েছে।

রাউচ বলেন, “৯/১১ পরে সাধারণ মানুষের সহমর্মিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতিতেও আমরা নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পেরেছি।”

৯/১১’র বর্ষপূর্তিকে ঘিরে ১১ সেপ্টেম্বর স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর এই হামলা ও দিনটি স্মরণের গুরুত্ব বিষয়ে জানার সুযোগ তৈরি করতে প্রতিবছর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জাদুঘরের কর্মী, অংশগ্রহণকারী এবং অতিথি বক্তাদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে থাকে।

নিবন্ধটি আগেও প্রকাশিত হয়েছিলো গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে।