এই নারীরা গড়ে তুলছেন একটি নিরাপদ, উন্নততর বিশ্ব

নারীরা সর্বত্রই মানুষের জীবনকে উন্নত করে যাচ্ছেন। তাঁরা অনেক সময় বড় ধরনের ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়েও মানবাধিকার রক্ষা করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, আগামী ৪ মার্চ, ১৬তম বার্ষিক ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড বিতরণের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এমন ১২ জন নারীকে সম্মান জানাবে, যাঁরা অন্যদের ও নিজ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অসাধারণ সাহস, শক্তি ও নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

২০০৭ সাল থেকে, ৮০টিরও বেশি দেশের ১৭০ জনেরও বেশি নারীকে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ হিসেবে মনোনীত করেছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ২০২২ সালে পুরস্কার পাচ্ছেন:

আফ্রিকা

বামে: ফাসিয়া বোয়েনো হ্যারিস (© জন হার্লি) ডানে: রোয়েচান্ডা প্যাসকো (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
বামে: ফাসিয়া বোয়েনো হ্যারিস (© জন হার্লি) ডানে: রোয়েচান্ডা প্যাসকো (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)

ফাসিয়া বোয়েনো হ্যারিস, লাইবেরিয়াতে নারী অধিকারের পক্ষে আজীবন কথা বলেছেন এবং স্কুল-বয়সী মেয়েদের যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষা ও তাদের শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে কাজ করছেন। তিনি প্যারামাউন্ট ইয়ং উইমেন ইনিশিয়েটিভের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে স্যানিটেশন ও যৌন সহিংসতার মতো বিষয় নিয়ে কাজ করা অন্য দলগুলোর সঙ্গেও সমন্বয় করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার রোয়েচান্ডা প্যাসকো, কেপটাউনের ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য শান্তি, ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তির পক্ষে কথা বলেন। নিজের জীবনের ওপর হুমকি ও হামলা সত্ত্বেও তিনি — বিশেষভাবে নারী ও শিশুদের জন্য — নিরাপদ কমিউনিটি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়া

বামে: ব্যানারে স্বাক্ষর করছেন এক নারী (© রোমিও গাকাড/এএফপি/গেটি ইমেজেস) ডানে: গিটার হাতে বসে আছেন এক নারী (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
বামে: ই থিনজার মং (© রোমিও গাকাড/এএফপি/গেটি ইমেজেস) ডানে: ফাম ডোয়ান ট্রাং (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)

বার্মার ই থিনজার মং, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, বার্মিজ সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পর শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন। মানবাধিকার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার ব্যবস্থা রক্ষায় কাজ করে আসা থিনজার মংকে, ছাত্র সংসদ ও সংখ্যালঘু ভাষায় পাঠদান নিষিদ্ধ করা একটি আইনের বিরোধিতার জন্য, ২০১৫ সালে কারারুদ্ধ করা হয়।

ফাম ডোয়ান ট্রাং, ভিয়েতনামের একজন লেখক, সাংবাদিক ও ব্লগার। তিনি আইনের শাসন, রাজনৈতিক অন্তর্ভূক্তি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রবক্তা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতপ্রকাশের জন্য, “রাষ্ট্র-বিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর” অভিযোগে তাঁকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইউরোপ

বামে: দোইনা গেরমান (© সের্গেইবুকিকো ডট কম) ডানে: কারমেন গিওর্গে (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
বামে: দোইনা গেরমান (© সের্গেইবুকিকো ডট কম) ডানে: কারমেন গিওর্গে (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)

দোইনা গেরমান, মালদোভার পার্লামেন্ট সদস্য। তিনি নারী অধিকারের প্রবক্তা, নারীদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমর্থক এবং পারিবারিক ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নে কাজ করছেন। গেরমান, পার্লামেন্টের মানবাধিকার কমিটিতেও কাজ করেছেন।

কারমেন গিওর্গে, ই-রোমনিয়ার প্রেসিডেন্ট, যেটি রোমানিয়ায় নারী ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর অধিকার রক্ষায় কাজ করে। তিনি বিভিন্ন জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট দলকে এলজিবিটিকিউআই+, জেন্ডার ও রোমা ইস্যুতে প্রশিক্ষণ দেন। বিভিন্ন রোমা সম্প্রদায়ের সমর্থনে সরকারি নীতিমালা তৈরির জন্য তিনি ন্যাশনাল এজেন্সি অব রোমা-তে কাজ করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা

বামে: নায়লা এল মাঙ্গুশ (© ইয়াসির আল-জায়াত/এএফপি/গেটি ইমেজেস) এবং তাইফ সামি মোহাম্মদ (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
বামে: নায়লা এল মাঙ্গুশ (© ইয়াসির আল-জায়াত/এএফপি/গেটি ইমেজেস) এবং তাইফ সামি মোহাম্মদ (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)

তাইফ সামি মোহাম্মদ, ২০১৯ সাল থেকে ইরাকের উপ-অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৩৬ বছর ধরে কাজের মাধ্যমে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বাজেটীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে, তিনি ইরাকে ”লৌহমানবী” হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।

নায়লা মাঙ্গুশ, ২০১১ সালের বিপ্লবের সময় লিবিয়ার ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের পাবলিক এনগেজমেন্ট ইউনিটের প্রধান হিসেবে, শক্তিশালী একটি নাগরিক সমাজ গঠনে সমর্থন যুগিয়েছিলেন। ২০২১ সালের মার্চে, তিনি প্রথম নারী হিসেবে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ফুলব্রাইট স্কলার মাঙ্গুশ, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন এবং ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন মেনোনাইট ইউনিভার্সিটি ও জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রী নিয়েছেন।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া

বামে: রিজওয়ানা হাসান (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ডানে: ভূমিকা শ্রেষ্ঠা (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
বামে: রিজওয়ানা হাসান (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ডানে: ভূমিকা শ্রেষ্ঠা (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)

রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশে দূষণ, বন উজাড় ও অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা জিতেছেন। হাসান, একজন পরিবেশবাদী আইনজীবী হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করেন, এবং ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন পরিবেশ বিষয়ক নায়কের একজন হিসেবে মনোনীত হন।

ভূমিকা শ্রেষ্ঠা, নেপালে লৈঙ্গিক সংখ্যালঘু অধিকারের প্রবক্তা। তাঁর কাজ, নাগরিকত্বের নথিতে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় প্রদানের অনুমতি দিতে উৎসাহ যুগিয়েছে নেপালের সুপ্রিম কোর্টকে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এলজিবিটিকিউআই+ কমিউনিটির সমর্থনে সরকারি নীতিমালা তৈরির পক্ষে কাজ করেছেন শ্রেষ্ঠা।

দক্ষিণ আমেরিকা

বামে: সিমোনে সিবিলিও দো নাসিমেন্তো (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ডানে: হোসেফিনা ক্লিঙ্গার জুনিগা (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)
বামে: সিমোনে সিবিলিও দো নাসিমেন্তো (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ডানে: হোসেফিনা ক্লিঙ্গার জুনিগা (স্টেট ডিপার্টমেন্ট)

সিমোনে সিবিলিও দো নাসিমেন্তো, রিও ডি জেনিরোর একজন আইনজীবী, যিনি মাদক পাচার, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় পুলিশের সাজা না পাওয়ার মত বিষয় নিয়ে লড়ছেন, এবং লৈঙ্গিক সহিংসতা ও সমাজ-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা উন্মোচন করেছেন।

কলম্বিয়ার হোসেফিনা ক্লিঙ্গার জুনিগা, মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেন। ক্লিঙ্গার জুনিগা, মানো কামবিয়াদা-র (চেঞ্জড হ্যান্ড) প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে টেকসই ইকো-ট্যুরিজমের সমর্থনে প্রচারণা চালান এবং কলম্বিয়ার প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলে গ্রামীণ আফ্রো-কলম্বিয়ান ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন করেন।